ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ইসলাম কখনো জুলুমকে প্রশ্রয় দেয় না। কারবালার ঘটনা আমাদের শিখিয়েছে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে জীবন দিতেও পিছপা হওয়া উচিত নয়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বাণী
পবিত্র আশুরার প্রেক্ষাপটে এক গুরত্বপূর্ণ বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাণীতে তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারী সকল সাহসী শহীদের প্রতি। তিনি বলেন, “ইসলাম হচ্ছে সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। এই মহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে গিয়েই হজরত ইমাম হোসেন (রা.) তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ শুধু ইসলামের ইতিহাস নয়, মানবজাতির ইতিহাসেও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তারা আমাদের শিখিয়েছেন — জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই প্রকৃত ঈমানদারির প্রতীক।”
কারবালার বিয়োগান্তক ইতিহাস ও আশুরার তাৎপর্য
হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম তারিখটি ইসলামের ইতিহাসে একটি শোকাবহ অধ্যায়। এই দিনেই ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর পরিবার ও সহচরবৃন্দ। কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা কেবল ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে ন্যায় ও সত্যের জন্য উৎসর্গের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
আশুরা শুধু কারবালার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং তা পালন করতে সাহাবিদের উৎসাহিত করতেন। হাদিসে বলা হয়েছে, আশুরার দিনে দুই রোজা রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রিয় নবী (সা.)।
শান্তির ধর্ম ইসলামের শিক্ষা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ইসলামের মর্মবাণী হলো শান্তি, সহানুভূতি এবং ন্যায়। কারো উপর জুলুম ইসলাম কখনোই মেনে নেয় না। ইসলামের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই হচ্ছে প্রকৃত ইমানদারের পরিচয়।”
তিনি বলেন, “হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এর আত্মত্যাগ আমাদের শেখায়, ধর্মীয় নীতিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে জীবনের মূল্যও দিতে হয়। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই শিক্ষাগুলো অনুশীলন করা এবং সমাজে শান্তি ও ন্যায়ের বীজ বপন করা।”
আশুরা উপলক্ষে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বাণীতে আরও বলেন, এই মহিমান্বিত দিনে আমরা যেন হিংসা ও হানাহানি ভুলে গিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াই। তিনি বলেন, “সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত কাজ করতে হবে। পবিত্র আশুরার এই দিনে আমি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অগ্রগতি কামনা করছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন।”
ইসলামের ইতিহাসে আশুরার গুরুত্ব
আশুরা কেবল কারবালার স্মরণেই নয়, এটি ইসলামী ক্যালেন্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইতিহাসে জানা যায়, এই দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে — যেমন, হজরত মূসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন আল্লাহ। সে কারণে ইহুদি সম্প্রদায়ও এই দিনটি পালন করে। রাসূল (সা.) এই দিনটির তাৎপর্য বুঝে মুসলমানদের উৎসাহ দেন তা রোজার মাধ্যমে স্মরণ করতে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আশুরার বার্তা
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে যখন মুসলিম জাতি বিভক্ত, তখন আশুরার বার্তা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। এটি শুধুই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান। আমরা কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, কীভাবে নিরীহ মানুষের পাশে দাঁড়াই — সেটাই আশুরা আমাদের শেখায়।
আশুরা আমাদের কী শেখায়?
পবিত্র আশুরার শিক্ষা হলো, সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া — তা যত কষ্টকর হোক না কেন। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সেই মূল বার্তাকেই তুলে ধরেছে। মুসলিম উম্মাহ যদি এই শিক্ষাকে আত্মস্থ করে, তাহলে সমাজে শান্তি, ন্যায় ও ঐক্যের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
“তবে বিশ্লেষকদের মতে, আশুরার প্রকৃত শিক্ষা যদি ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হয়, তবে জুলুম-অবিচারের শিকড় উপড়ে ফেলাও সম্ভব।”
এম আর এম – ০১৮১, Signalbd.com