করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৬

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াল ২৪ জনে। শনাক্তের হার ২.৫১ শতাংশ।
করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ আপডেট
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৬ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার (৫ জুলাই) প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ভিত্তিতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
বিস্তারিত তথ্য ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিবরণ
মারা যাওয়া ব্যক্তি একজন পুরুষ, বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এ নিয়ে ২০২৫ সালে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪ জনে। এদের মধ্যে ১৩ জন নারী ও ১১ জন পুরুষ।
এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৬২৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় তুলনামূলক কম হলেও সম্প্রতি শনাক্তের হার আবারও বাড়ছে।
করোনার বর্তমান ঢেউ কতটা উদ্বেগজনক?
২০২০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমণ, মৃত্যু ও বিধিনিষেধে মানুষের জীবনযাপন প্রভাবিত হয়েছে। যদিও টিকা কার্যক্রম ও সচেতনতার ফলে গত দুই বছরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে আসে।
তবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে আবারও করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিগত এক মাস ধরে আক্রান্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভাগভিত্তিক মৃত্যু ও সংক্রমণের চিত্র
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে (১০ জন)। এরপর রয়েছে ঢাকা বিভাগ (৯ জন), খুলনা বিভাগ (৩ জন) ও সিলেট বিভাগ (২ জন)।
এছাড়া সাম্প্রতিক শনাক্তদের বেশিরভাগই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা এলাকা থেকে এসেছে বলে জানা গেছে।
শনাক্তের হার ও নমুনা পরীক্ষার বর্তমান অবস্থা
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ২৩৯টি। এই সংখ্যাটি অনেকটাই কম। এই স্বল্প নমুনা পরীক্ষার মধ্যেই ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আক্রান্তের হারকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা যত কম হবে, শনাক্তের হার তত বেশি মনে হবে। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সতর্কবার্তা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন করোনার তেমন কোন প্রভাব না থাকায় জনগণের মধ্যে অসচেতনতা দেখা দিয়েছে। অনেকে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা থেকে দূরে সরে গেছেন।
বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা সুলতানা বলেন,
“করোনা সম্পূর্ণ চলে যায়নি। এটি এখন এন্ডেমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিছুদিন পরপরই এটি আবার মাথাচাড়া দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, যদি নমুনা পরীক্ষার হার না বাড়ানো হয়, তাহলে প্রকৃত সংক্রমণের চিত্র স্পষ্ট হবে না। এতে ভবিষ্যতে হঠাৎ করে বড় আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
করণীয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সকল নাগরিককে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিক, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্তদের মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া যারা এখনও বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের দ্রুত টিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সারসংক্ষেপ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত মনে হলেও, হঠাৎ করে আবার মৃত্যুর সংখ্যা এবং শনাক্তের হার বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। স্বল্প সংখ্যক পরীক্ষার মধ্যেই যদি শনাক্তের হার ২.৫১ শতাংশ হয়, তাহলে অধিক নমুনা পরীক্ষায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগেভাগে সতর্কতা না নিলে এই সংক্রমণ আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তবে জনগণের সচেতনতা এবং সরকারি তদারকি মিলে ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ পথ তৈরি করতে পারে।
এম আর এম – ০১৭৩, Signalbd.com