জাতীয়

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

সোমবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার নানা দিক।

গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ

সোমবার (৩০ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিশ্চিত করেন, দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী এ সংলাপ “উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক” ছিল।

আলোচনার মূল বিষয়বস্তু: গণতন্ত্র ও সহযোগিতা

সূত্র জানায়, আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়টি। ড. ইউনূস ও রুবিও উভয়েই গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত রাখা, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বিশেষত, আগামী নির্বাচন, মিডিয়ার স্বাধীনতা ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও সহযোগিতার প্রস্তাব আলোচনায় গুরুত্ব পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথমবারের মতো উচ্চপর্যায়ের মার্কিন সংলাপ।
ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে এই ফোনালাপ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দুই দেশের অবস্থান: বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন

ফোনালাপে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ, দীর্ঘস্থায়ী ও রূপান্তরমুখী’ বলে অভিহিত করেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমখাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা

এই ফোনালাপকে বিশেষজ্ঞরা কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহরাব হোসেন বলেন—
“যুক্তরাষ্ট্রের এই যোগাযোগ বার্তা দেয় যে তারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অংশীদারিত্বে আগ্রহী।”

তিনি আরও বলেন, “এই সংলাপ শুধু রাজনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং আগাম নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।”

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি

ফোনালাপের পর দু’দেশের মধ্যে নতুন মাত্রায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বা প্রতিনিধি বিনিময় হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করলেও, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আরও কিছু কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশও এর জবাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানো ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মার্কিন সহযোগিতা কামনা করেছে।

“ফোনালাপটি ছিল আন্তরিক ও গঠনমূলক, যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি”—শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

উপসংহার: 

এই ফোনালাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন গতি পেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সজাগ দৃষ্টির মধ্যে এমন এক সংলাপ বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক চেষ্টার ইতিবাচক ফল বলেই ধরে নেওয়া যায়।
তবে পরিস্থিতি কতটা এগোবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়ার ওপর।

এম আর এম – ০১১৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button