ভুলে ম্যাগাজিন নিয়ে যায় আসিফ, আর যেন এমন না হয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫ — শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি টার্মিনালে ভুলক্রমে আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন (গুলিভর্তি নয়) বহনের ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
আসিফ মাহমুদ রবিবার সকালে মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ঢাকা ছাড়েন। এ সময় বিমানবন্দরের স্ক্যানারে তার হাতব্যাগে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন ধরা পড়ে। স্ক্যানিংয়ের পর তিনি নিজেই সেটি প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করেন।
পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কীভাবে ভুলে আগ্নেয়াস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করলেন? বিশেষ করে যাত্রী নিরাপত্তা এবং এভিয়েশন বিধিমালার বিষয়টি সামনে এনে অনেকে এই ঘটনাকে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি করেছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া
সোমবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “এটা সত্যি যে আসিফ মাহমুদ ভুলক্রমে ম্যাগাজিন নিয়ে গিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
তিনি আরও জানান, অস্ত্রের লাইসেন্স কীভাবে এবং কোন মানদণ্ডে দেয়া হয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। “একজন ব্যক্তি কীভাবে, কবে, কোন প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স পেলেন — এসব বিষয়ও আমরা পর্যালোচনা করব,” বলেন তিনি।
আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ব্যাখ্যা দিয়ে একটি পোস্ট করেন আসিফ মাহমুদ। সেখানে তিনি জানান, “ভোরে তাড়াহুড়ো করে প্যাকিংয়ের সময় একটি ম্যাগাজিন ভুলক্রমে ব্যাগে রেখে দিই। এটি পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। যখন স্ক্যানারে ধরা পড়ে, তখনই আমি সেটি আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করি।”
তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে আমার বৈধ লাইসেন্স করা অস্ত্র রয়েছে। সরকারি নিরাপত্তা সবসময় থাকে না, তাই নিজেকে এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্যই এই পদক্ষেপ।”
এভিয়েশন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রী নিরাপত্তা রক্ষা করা বিমানবন্দরের অন্যতম বড় দায়িত্ব। এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে স্ক্যানিং পদ্ধতি এবং ভিআইপি টার্মিনালের তদারকি নিয়ে। একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, “ভিআইপিদের ক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তা প্রটোকল শিথিল হয়, তবে তা ভবিষ্যতে বড় বিপদের কারণ হতে পারে।”
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “লাইসেন্স করা অস্ত্র থাকলেও সেটি ঘোষণার মাধ্যমে আনা বাধ্যতামূলক। ঘোষণা ছাড়া বা ভুলক্রমে এমন কিছু নিয়ে এলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়।”
লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্ত নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আসিফ মাহমুদ কবে এবং কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। অস্ত্র লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়স এবং তিন বছর ধারাবাহিকভাবে আয়কর দেয়ার রেকর্ড থাকতে হয়। যদিও নীতিমালার ৩২(২) ধারায় মন্ত্রী ও সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য, মেয়র ইত্যাদি শ্রেণির জন্য এসব শর্ত শিথিল করা যায়।
তবে অনেকেই দাবি করছেন, সরকারি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও একজন উপদেষ্টার অস্ত্র ও গুলি বহন নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল।
আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা
এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। অতীতে ঘোষণা ছাড়া বিমানবন্দরে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি নিয়ে প্রবেশ করায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অথচ আসিফ মাহমুদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে সমালোচনা করেছেন অনেকেই।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ ঘটনাটিকে হালকা ভুল হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে প্রভাবশালীদের প্রতি আইন প্রয়োগে বৈষম্য বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
সারসংক্ষেপঃ
এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা প্রটোকল আরও জোরদার করার আশ্বাস দিলেও, সাধারণ জনগণের মন থেকে প্রশ্নগুলো সরিয়ে নেয়া সহজ হবে না। সরকারের উচিত এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কঠোর নির্দেশনা তৈরি করা, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
এম আর এম – ০১০৭, Signalbd.com