দেশে আরও ১৩ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টা

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩০৮টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যদিও এই সময়ের মধ্যে করোনায় কেউ মারা যাননি, তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগ্রহ ভরে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাস আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১৩ জন। এ সময়ে মৃত্যুর কোনো খবর না থাকলেও সচেতনতার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
করোনা শনাক্তের হালনাগাদ চিত্র
রোববার (২৯ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে ঢাকাসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর দীর্ঘ পথচলা
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর ১৮ মার্চ ঘটে প্রথম মৃত্যু। সেখান থেকে শুরু হয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৯৩ জনে।
মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫২১ জন। চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়, যা বোঝায় যে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ভাইরাস এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান: কী বলছে তথ্য?
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪টি। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছেন ৫৪৮ জন।
এদিকে চলতি বছরের মধ্যে যেসব ব্যক্তি মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং ১২ জন নারী। অঞ্চলভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১০ জন, ঢাকায় ৮ জন, খুলনায় ৩ জন এবং সিলেটে ১ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সতর্কতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের এই বৃদ্ধি নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের ইঙ্গিত নাও হতে পারে, তবে গ্রীষ্মকালে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই সবাইকে পুনরায় মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
“করোনা পুরোপুরি চলে যায়নি। প্রতি বছর এর সংক্রমণ কিছুটা হলেও বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক”—ডা. রুহুল আমিন, ভাইরোলজিস্ট
এছাড়া, যারা বয়স্ক ও পূর্ব থেকে অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে টিকার বুস্টার ডোজ নেয়ার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনসচেতনতা ও প্রতিক্রিয়া: মানুষ কতটা প্রস্তুত?
বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় সাধারণ মানুষ অনেকটাই সচেতন হলেও সাম্প্রতিক সময়ে গা-ছাড়া মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাজার, গণপরিবহন ও অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে গেছে।
অনেকে মনে করছেন, “মৃত্যুহীন” রিপোর্ট এলেই সবাই আত্মতুষ্টিতে ভোগে, যা বিপজ্জনক হতে পারে। এমন অবস্থায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সামনে কী হতে পারে?
বর্তমানে শনাক্তের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, এটি একটি সতর্ক সংকেত। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, ভাইরাস ছড়ানোর গতি খুব দ্রুত হতে পারে। সামান্য অবহেলাই একটি বড় সংকটে পরিণত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেস্টিং কার্যক্রম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ এবং আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সারসংক্ষেপঃ
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে নতুন ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং কেউ মারা যাননি — এটি যেমন কিছুটা স্বস্তিদায়ক, তেমনই নতুন করে উদ্বেগের বার্তা। সামনে বর্ষা মৌসুম ও ভাইরাস সংক্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় আগাম সতর্কতাই হতে পারে ভবিষ্যতের সুরক্ষা।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায় — সাধারণ মানুষের শৈথিল্য ও স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা চলতে থাকলে কি আবারও করোনা আমাদের জীবন থামিয়ে দেবে?
“করোনা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, বরং এটি এখন নিয়মিত রূপ নিচ্ছে। জনসচেতনতা না বাড়লে আবারও বাড়তে পারে সংক্রমণ।” — স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের