ডেঙ্গুতে ২ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু, হাসপাতালে ২৬২

দেশজুড়ে আবারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ একদিনেই এক শিশু মারা গেছে, এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬২ জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশালে মাত্র ২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একইসাথে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬২ জন। চলমান পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত:
শনিবার (২৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। তার বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। চলতি বছর এ নিয়ে মোট ৪১ জনের মৃত্যু হলো ডেঙ্গুতে, যার মধ্যে এই শিশুটি সর্বশেষ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ২৬২ জন রোগী।
ভর্তিকৃত রোগীদের বিভাজন: কোন এলাকায় কতজন?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী:
- বরিশাল বিভাগেই সর্বোচ্চ ১৪১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, যা মোট ভর্তিকৃতদের প্রায় ৫৪ শতাংশ।
- ঢাকা মহানগরে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন।
- চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ জন,
- ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোতে ১৮ জন,
- খুলনা বিভাগে ৬ জন,
- ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন,
- সিলেট বিভাগে ৩ জন ভর্তি হয়েছেন।
এতে বোঝা যাচ্ছে, বরিশাল বিভাগে এডিস মশার বিস্তার এবং আক্রান্তের হার অন্য যেকোনো বিভাগের চেয়ে বেশি।
আগের বছরগুলোর চিত্র কেমন ছিল?
২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের, এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোট ১,০১,২১৪ জন।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান রেকর্ড ১,৭০৫ জন, এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩,২১,১৭৯ জন।
এই পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার, ২০২৫ সালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান গতি বজায় থাকলে আগের বছরের সংখ্যা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: কেন বাড়ছে সংক্রমণ?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অসময় বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা ও জনসচেতনতার অভাব ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটানোর অন্যতম কারণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন:
“বৃষ্টির পানি জমে থাকা অবস্থায় এডিস মশা ডিম পাড়ে। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, চলমান বর্ষা মৌসুমে প্রতিটি বাসাবাড়ি, অফিস, স্কুল এবং হাসপাতালের আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা একান্ত জরুরি।
মৃত্যুর পরিসংখ্যান: লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪১ জন। এর মধ্যে:
- পুরুষ: ২৩ জন
- নারী: ১৮ জন
এই সংখ্যাগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার পুরুষদের মধ্যে সামান্য বেশি। তবে শিশু এবং বয়স্কদের জন্য সংক্রমণ অনেক বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে।
জনসচেতনতা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা: কী করতে হবে এখন?
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব:
- জমে থাকা পানি অপসারণ করুন, বিশেষ করে ফুলের টব, ড্রাম, ফ্রিজের ট্রে, এবং টায়ারে।
- প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানো হোক বাসা ও অফিসে।
- ফুল হাতা পোশাক এবং মশারি ব্যবহার করুন।
- ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও সক্রিয় হতে হবে।
সামনে কী হতে পারে?
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে চলতি বর্ষা মৌসুমে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে সংক্রমণ। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে — বিশেষ করে শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের মাঝে।
তবে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনসাধারণ একযোগে কাজ করলে এই বিপদ এড়ানো সম্ভব। এখন সময় সচেতন হওয়ার, আগে থেকে সতর্ক থাকার।
এম আর এম – ০০৮৯, Signalbd.com