জাতীয়

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি ১৯৫

দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি ১৯৫ জন। চলতি বছরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮ জনে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৯৫ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৮ জন।

বিস্তারিত 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, ২৫ জুন সকাল ৮টা থেকে ২৬ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ১৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন।

এই সময়ে মারা যান দুই জন—তাদের মধ্যে একজন কিশোর এবং অন্যজন একজন নারী বলে জানা গেছে। দুজনই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন মোট ১,০৩২ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি আছেন ২৯৮ জন এবং বাকিরা দেশের অন্যান্য বিভাগে।

পূর্বপটভূমি

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯,০৬৫ জন। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিল মাসে ৭০১ জন, মে মাসে ১,৭৭৩ জন এবং জুন মাসে এখন পর্যন্ত ৪,৭২০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

জুন মাসেই এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। এ থেকে বোঝা যায়, গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বেড়ে যাচ্ছে।

আঞ্চলিক পরিসংখ্যান

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগে, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৭৪ জন। এর মধ্যে বরগুনা জেলায় ৪১ জন। এছাড়া—

  • ঢাকা মহানগরে: ৬০ জন
  • ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায়: ৩০ জন
  • রাজশাহী বিভাগে: ১৮ জন
  • চট্টগ্রাম বিভাগে: ৮ জন
  • সিলেট বিভাগে: ৩ জন
  • ময়মনসিংহ বিভাগে: ২ জন

এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে যে বরিশাল এবং ঢাকার বাইরের অঞ্চলগুলোতেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে।

ডেঙ্গুর বিস্তৃতি ও গবেষণা

সম্প্রতি আইইডিসিআর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা পৌরসভার ৩১% বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। গৌরিচন্না ইউনিয়নে এই হার ৭৬%। এডিস মশার উপস্থিতি এতো বেশি যে, পৌর এলাকার কিছু ওয়ার্ডে প্রতি ১০টি বাড়ির মধ্যে ৮টিতে লার্ভা মিলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বরগুনার সংক্রমণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার চেয়ে আট গুণ বেশি। শুধু ২০২৪ সালেই বরগুনা ছিল দেশের চতুর্থ বৃহৎ ডেঙ্গু সংক্রমণের এলাকা। তখন ২,৪৩৪ জন আক্রান্ত হন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় এডিস মশা ধ্বংস করা, তাই জনগণকে নিজের ঘর ও চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। বৃষ্টির পরে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে, তাই ছাদে রাখা ফুলের টব, পুরনো টায়ার, ড্রাম বা অন্যান্য পাত্র থেকে পানি দ্রুত সরাতে হবে।

“বর্ষার মৌসুমে এডিস মশার বিস্তার বেশি হয়, তাই এখনই সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে”—ডা. হাবিবুর রহমান, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ।

সারসংক্ষেপঃ

ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বরিশাল ও বরগুনার মতো অঞ্চলে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলছেন, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা অনেক সময় যথেষ্ট নয়।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—নগর কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি কি আদৌ সম্ভব?

এম আর এম – ০০৬৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button