নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আবারও এক তরুণের পা উড়ে গেছে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবারও স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে পরিচিত এক যুবক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি আবারও সামনে এলো।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবারও ভয়াবহ স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর মাইন বিস্ফোরণে ওমর মিয়া (২৫) নামে এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলের বিস্তারিত:
জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জারুলিয়াছড়ি বিওপি সংলগ্ন ৪৬ ও ৪৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের মধ্যবর্তী শূন্যরেখা পেরিয়ে প্রায় ৪০০ মিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত ওমর মিয়া কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের মৌলভীকাটা এলাকার বাসিন্দা।
বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসরুরুল হক জানিয়েছেন, “বিস্ফোরণে আহত যুবক সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে। ঘটনাটি মিয়ানমারের ভেতরে ঘটেছে।”
সীমান্তে বাড়ছে ঝুঁকি ও হুমকি
গত এক বছর ধরেই নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গে সামরিক জান্তার সংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তারা ব্যাপক হারে মাইন পুঁতে রেখেছে বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, চলতি মাসের ২২ জুন নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্তেও একই ধরনের বিস্ফোরণে এক কিশোরের পা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। গত এক বছরে এমন ঘটনায় অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বা পা হারিয়েছেন।
সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ: একটি গভীর সংকট
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আহত ওমর মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত দিয়ে গরু ও মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। সীমান্তের এপাশ থেকে ওপাশে নিয়মিত যাতায়াতের সময় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু অঞ্চলের অনেক যুবক আর্থিক সুবিধার আশায় অনিয়ন্ত্রিত এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এই পথে পা বাড়ানো মানেই জীবন নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া, তা একাধিক ঘটনার মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রমাণিত।
প্রশাসনের অবস্থান
ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, “আমরা প্রায়ই গুলির শব্দ ও বিস্ফোরণ শুনি। সীমান্তে আমাদের চলাফেরা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সীমান্তে চলাচল সম্পর্কে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় জনসাধারণকে প্রবেশ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত: প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক পদক্ষেপ
সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ধরনের ঘটনা শুধুই আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়, বরং এটি একটি কূটনৈতিক ও মানবিক সংকট। বাংলাদেশ সরকারকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনায় যেতে হবে।”
তারা আরও বলেন, “সীমান্তে পর্যাপ্ত নজরদারি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা আরও বাড়তে পারে।”
সারসংক্ষেপঃ
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির ওপর নয়, পুরো এলাকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলছে।
বারবারের এমন বিস্ফোরণ প্রমাণ করে, সীমান্তবর্তী জনগণের জীবন এখন এক অনিশ্চয়তার মুখে। প্রশ্ন হলো—এই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা কবে আসবে?
এম আর এম – ০০৫১, Signalbd.com