জাতীয়

লঞ্চ থেকে পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু – ‘আমার মেয়ে নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না’

ভোলার এক কলেজছাত্রী লঞ্চ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানানো হলেও, তাঁর পরিবার এবং কলেজ ছাত্রদলের দাবি—ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, বরং এটি হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা সরকারি কলেজের সামনে মানববন্ধন করেন কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে, না তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, না ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে—আমরা কিছুই জানি না। শুধু জানি, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যদি কোনো অপরাধী জড়িত থাকে, তার যেন শাস্তি হয়।’

কী ঘটেছিল?

গত ১৭ জুন সকাল ১০টার দিকে ভোলা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ কর্ণফুলী-৪ ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে ছাড়ে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে লঞ্চটির তিনতলার পেছন দিক থেকে এক তরুণী মেঘনায় পড়ে যান বা ঝাঁপ দেন—এমন দাবি করেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁরা লঞ্চ ঘুরিয়ে খোঁজ করেও তরুণীকে পাননি।

চার দিন পর, ২০ জুন লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ি নদীতীর থেকে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে। পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা ছবির মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করেন।

নৌ পুলিশ জানায়, মরদেহের সুরতহালে শরীরে কালো দাগ দেখা গেছে, যা ঘাত-প্রতিঘাত বা নির্যাতনের ইঙ্গিত হতে পারে।

পরিবার যা বলছে

মৃত তরুণীর মা বলেন, তাঁর মেয়ে ১৭ জুন সকালে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে আর ফেরেনি। ওই দিন থেকেই ফোন ধরেনি, পরে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। তিনি মেয়ের স্কুল, কলেজ, বান্ধবীদের বাসায় খোঁজ নিয়েও সন্ধান পাননি।

তিনি আরও জানান, মেয়ের বিয়ে হয়েছিল দেড় বছর আগে। পরে স্বামী তালাকনামা পাঠান। এই নিয়ে আদালতে দুটি মামলা চলমান। ‘মেয়েটা শান্ত স্বভাবের ছিল। কেউ তাকে বিরক্ত করছে, এমন কথাও কখনো বলেনি।’

ছাত্রদলের অবস্থান

মৃত তরুণী ভোলা সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। আজকের মানববন্ধনে কলেজ ছাত্রদলের নেতারা বলেন, ‘একটি মহল ছাত্রী ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। আমরা এ ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।’

বক্তারা আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কেউ উসকানিমূলক পোস্ট দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্তের অগ্রগতি

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোন্নাফ জানান, নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।

সংক্ষেপে:

  • ১৭ জুন লঞ্চ থেকে নদীতে পড়ে যান কলেজছাত্রী
  • ২০ জুন নদীতীরে পাওয়া যায় মরদেহ
  • পরিবারের দাবি: আত্মহত্যা নয়, রহস্যজনক মৃত্যু
  • ছাত্রদলের দাবি: তদন্ত করে দোষীদের বিচার
  • পুলিশ: একটি হত্যা মামলা রুজু, তদন্ত চলমান

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button