জাতীয় নির্বাচন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হতে পারে: জামায়াত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানের প্রস্তাব উত্থাপন করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা থাকলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধান অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে তারা কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।
কী বলেছে জামায়াত?
২৩ জুন, সোমবার ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দলের নেতারা কানাডার হাইকমিশনার ড. অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের জানান,
“ভোটারবিহীন নির্বাচনের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে এবং তত্ত্বাবধান করবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন যেন পক্ষপাতহীন ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় — সে জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অপরিহার্য।”
কেন এমন প্রস্তাব?
বাংলাদেশে বিগত কিছু নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ না থাকায় বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, শুধু দেশীয় উদ্যোগে নয়, বরং আন্তর্জাতিক সহায়তা ও তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হলে তা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে।
জামায়াতের মতে, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই।
পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব ও গণভোটের দাবি
বৈঠকে আরও আলোচনায় আসে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব। জামায়াতের মতে, সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্য না হলে পিআর পদ্ধতিসহ অন্যান্য মৌলিক বিষয়ের ওপর গণভোটের ব্যবস্থা করা উচিত।
সৈয়দ তাহের বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেওয়া হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান হতে পারে।”
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রত্যাশা
বৈঠকে জামায়াত নেতারা কানাডার রাষ্ট্রদূতকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ, কানাডা ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
জামায়াত নেতারা মনে করেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও মিডিয়ার উপস্থিতি নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
রাজনৈতিক ঐক্যমতের প্রেক্ষাপট
জামায়াত জানায়, তারা জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করেছে এবং সেখানে কিছু প্রস্তাব নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, নারী আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি, এবং নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন — এসব বিষয় আলোচনায় এসেছে।
তারা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে উঠলে তা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।
“একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অভ্যন্তরীণভাবে নয়, আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণই পারে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে।”
— সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নায়েবে আমির, জামায়াতে ইসলামী
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এই প্রস্তাব বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানের আওতায় নির্বাচন আয়োজনের দাবি দেশে-বিদেশে আলোচনার জন্ম দিতে পারে। তবে সরকার এবং অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তার ওপরই নির্ভর করছে এই প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ।
এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন ও সরকার এই প্রস্তাবকে কীভাবে গ্রহণ করে এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে কোনও সমঝোতার পথ খোলে কি না।
এম আর এম – ০০১২, Signalbd.com