নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ময়দা দিয়ে নকল ওষুধ তৈরি করার দায়ে রব্বানী ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। অভিযানটি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ও আনসার ব্যাটালিয়নের একটি দলের সহায়তায় সম্পন্ন হয়।
অভিযান ও উদ্ধার
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সদর ইউনিয়নের বাজেডুমরিয়া এলাকার সরকার পাড়ায় পরিচালিত এই অভিযানে রব্বানী ইসলামের বাড়ি তল্লাশি চালানো হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ময়দা দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির নকল ওষুধ, ওষুধ তৈরির মেশিন ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
ভোক্তা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, অভিযানে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার নকল ওষুধ এবং অনিরাপদ খাদ্য জব্দ করা হয়। এসব পণ্য নিরাপত্তা বিধিমালা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়েছিল। জব্দ করা পণ্যগুলো পরে নিরাপদভাবে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিদফতরের বক্তব্য
জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সামসুল হক বলেন,
“গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ময়দা দিয়ে তৈরি নকল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। অনিরাপদ খাদ্য এবং নকল ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে ভোক্তা অধিকার আইনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং চালাচ্ছে, যাতে ভোক্তারা নিরাপদ ওষুধ ও খাদ্যপণ্য পেতে পারেন।
ওষুধ প্রশাসনের মন্তব্য
জেলা ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক মিতা রায় জানান, রব্বানী ইসলাম তার বাড়িতে ময়দা ব্যবহার করে নকল ওষুধ তৈরি করতেন। তিনি বলেন,
“এ ধরনের নকল ওষুধ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অভিযান চলাকালে এসব নকল ওষুধ এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং ভোক্তাদের নিরাপদ ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা।”
নকল ওষুধের ভয়াবহতা
নকল ওষুধ মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এগুলোতে কার্যকর উপাদান থাকে না বা থাকে খুবই কম পরিমাণে, আবার কখনও কখনও এতে বিপজ্জনক রাসায়নিকও থাকতে পারে। নকল ওষুধ ব্যবহারে ড্রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অসুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নকল ওষুধ কেবল ভোক্তার অর্থ ক্ষয় করে না, বরং মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলে। তাই ক্রেতাদের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ভোক্তা সচেতনতার গুরুত্ব
ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা সবসময় নকল ওষুধের চিহ্নিত বৈশিষ্ট্য যাচাই করে কিনবেন। যেমন:
- প্যাকেজিং ঠিক আছে কিনা
- মেয়াদ শেষ হয়নি কিনা
- অনুমোদিত কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের লোগো আছে কিনা
ভোক্তা অধিদফতর নিয়মিতভাবে সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বাজারে নকল ওষুধ সনাক্ত করার জন্য শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আইন ও শাস্তি
ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির জন্য জরিমানা করা হয়। এছাড়া গুরুতর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই ধরনের অভিযান জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জনমত
স্থানীয়রা জানান, নকল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান অনেক প্রয়োজন ছিল। তারা মনে করেন,
“এ ধরনের অভিযান মানুষকে সচেতন করতে সাহায্য করে এবং ভোক্তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।”
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন,
“আমরা চাই প্রতিটি মানুষ নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার করুক। নকল ওষুধের কারণে অনেক সময় রোগ বাড়ে এবং চিকিৎসা ব্যর্থ হয়।”
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
ভোক্তা অধিদফতর এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে,
“ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। আমরা প্রতিটি বাজার মনিটরিং করে নকল ওষুধ নির্মূলের চেষ্টা চালাব।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন,
“নকল ওষুধ নির্মূল করতে সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা একসাথে কাজ করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং বাজার পর্যবেক্ষণ একসাথে করতে হবে।”
ময়দা দিয়ে তৈরি নকল ওষুধ নির্মূলের অভিযান ভোক্তাদের জন্য এক ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। নকল ওষুধের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে জনগণকে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। ভোক্তা অধিদপ্তর এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এই যৌথ অভিযান প্রমাণ করে যে, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব।
MAH – 14186 I Signalbd.com



