স্বাস্থ্য

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা: কোচিং বন্ধ, প্রস্তুতি ও আসন তথ্য

Advertisement

সারাদেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার (এমবিবিএস ও বিডিএস) প্রস্তুতি ও পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত কমিটি সকল মেডিকেল কোচিং সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন বা অফলাইন যে কোনো ধরনের কোচিং কার্যক্রম চালু রাখা যাবে না।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন সোমবার (৮ ডিসেম্বর) জানান, ভর্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই সময়কালে স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. রুবীনা বলেন, “পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা প্রয়োজন। আমরা চাই কেউ অবৈধ বা প্রিভেট টিউশনি সুবিধা নিয়ে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে না যেতে পারে।”

ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ও প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • গত শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস পরীক্ষা হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি এবং বিডিএস পরীক্ষা ২৮ ফেব্রুয়ারি।
  • এবারের পরীক্ষা মাসাধিক আগে করা হয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপ বাড়লেও, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতেই এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আসনসংখ্যার পরিবর্তন

ভর্তি পরীক্ষার আগে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

সরকারি মেডিকেল কলেজের তথ্য

  • আগের আসন সংখ্যা: ৫,৩৮০টি
  • পরিবর্তন: ১৪টি মেডিকেল কলেজে কমানো হয়েছে ৩৫৫ আসন, ৩টি কলেজে বাড়ানো হয়েছে ৭৫টি আসন
  • নতুন আসন সংখ্যা: ৫,১০০টি

বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তথ্য

  • ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন কমানো হয়েছে ২৯২টি
  • ফলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬,০১টি

এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করলেও, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, এটি সমতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য সিদ্ধান্ত

কোচিং সেন্টার বন্ধের কারণ ও প্রভাব

ভর্তি পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো:

  1. শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ প্রদান
  2. পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভোটিং বা অন্য প্রভাবমূলক কোচিং কার্যক্রম প্রতিরোধ
  3. পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
  4. স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি কার্যকর করা

এখন পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

  • কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, কম প্রস্তুতির সময় এবং কোচিং বন্ধের কারণে চাপ আরও বেড়ে গেছে
  • অন্যদিকে, অনেকে বিশ্বাস করছেন, এটি পরীক্ষার ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করবে

প্রস্তুতি ও কৌশল

এমবিবিএস ও বিডিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ:

  1. পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নেওয়া
  2. সময়সূচী অনুযায়ী পড়াশোনা পরিকল্পনা করা
  3. মক টেস্ট ও অনলাইন সিমুলেশন ব্যবহার করা (কোচিং ছাড়া)
  4. স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রস্তুতি বজায় রাখা, চাপ কমাতে নিয়মিত বিরতি নেওয়া
  5. গুরুত্বপূর্ণ ফর্মুলা, ডায়াগ্রাম ও নোটস হাতে রাখা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলেও স্বাবলম্বী পড়াশোনা এবং সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা পরীক্ষার সাফল্যের চাবিকাঠি।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মন্তব্য

অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন আরও জানিয়েছেন, “ভর্তি পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা সুবিধাবঞ্চিত পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। তাই কোচিং সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী ন্যায্যভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।”

পরীক্ষার জন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ

  1. স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা হবে
  2. পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও পরিবেশ যাচাই করা হবে
  3. প্রবেশপত্র, সিটিং প্ল্যান এবং পরীক্ষা নিয়মাবলী সময়মতো প্রকাশ করা হবে
  4. মক টেস্ট ও অনলাইন পরীক্ষার সুবিধা কিছু শিক্ষার্থীর জন্য সরবরাহ করা হতে পারে

শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি

প্রস্তুতি এবং আসন পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনোবল ধরে রাখা, সময়ের সঠিক ব্যবহার, ও নিয়মিত বিরতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোচিং সেন্টার সাময়িক বন্ধ, আসন পরিবর্তন এবং পরীক্ষা এগিয়ে আনার মতো সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ আনলেও পরীক্ষার স্বচ্ছতা, সমতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের মূল লক্ষ্য

এবারের পরীক্ষা সঠিক প্রস্তুতি এবং স্থির মনোভাবের সঙ্গে মোকাবেলা করলে শিক্ষার্থীরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

MAH – 14181 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button