এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাতে দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
ডা. জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থাকে মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে চলছে তাঁর চিকিৎসা। একাধিক জটিল রোগে ভুগতে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে তাঁর সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে।
হাসপাতালে ভর্তির কারণ ও বর্তমান অবস্থা
বেগম খালেদা জিয়া মূলত তাঁর চলমান স্বাস্থ্য জটিলতার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ভর্তির তারিখ ও স্থান: বিএনপি চেয়ারপারসনকে রবিবার রাতে (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালটিতেই তিনি এর আগেও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।
শারীরিক অবস্থার গুরুত্ব: ডা. জাহিদ হোসেন এবং শায়রুল কবির খান উভয়ই নিশ্চিত করেছেন যে, মেডিকেল বোর্ড তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থাকে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। যদিও তাঁর সর্বশেষ শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে যে তাঁর ফুসফুস, যকৃৎ এবং হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত পুরনো জটিলতাগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা: দীর্ঘকাল ধরে তিনি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস এবং হৃদরোগের মতো জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। নিয়মিত ফলো-আপ এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তাঁর চিকিৎসারই অংশ।
চিকিৎসা তত্ত্বাবধান: মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশে এবং বিদেশে খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে।
মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধান: ভর্তির পর থেকেই খালেদা জিয়াকে একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। এই বোর্ড তাঁর চিকিৎসার অগ্রগতি, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র নিয়মিত পর্যালোচনা করছে।
চিকিৎসকের ভূমিকা: অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে বোর্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করছেন। তিনি জানান, বোর্ডটি তাঁর বর্তমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা: বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, হাসপাতালে তাঁকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা, বিশেষায়িত পরীক্ষা এবং নিবিড় পরিচর্যা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শারীরিক প্যারামিটারগুলো স্থিতিশীল রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
দেশবাসীর প্রতি চেয়ারপারসনের বার্তা
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া তাঁর অনুরাগীদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে একটি আবেগঘন বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
দোয়া চেয়েছেন: ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেনের মাধ্যমে বেগম জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘চেয়ারপারসন দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন যেন মহান আল্লাহ তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলেন।’
আবেগ ও সংযোগ: এই বার্তা তাঁর প্রতি জনগণের স্নেহ ও সমর্থনকে তুলে ধরে। তাঁর অসুস্থতা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে যে উদ্বেগ রয়েছে, এই বার্তার মাধ্যমে তিনি সেই উদ্বেগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রয়া: বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো সারাদেশে তাদের নেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া মাহফিল এবং বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে। তাঁর সুস্থতা দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জন্য এক গভীর মনোযোগের বিষয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ ভ্রমণ ও দেশে ফেরা
চলতি বছরে তাঁর বিদেশ ভ্রমণ এবং দেশে ফেরার ঘটনাটি তাঁর অসুস্থতার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা: উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ১১৭ দিন অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁর উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
দেশে প্রত্যাবর্তন: দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে তিনি গত ৬ মে দেশে ফেরেন। বিদেশ থেকে ফেরার পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাতায়াত করছেন।
চিকিৎসার ধারাবাহিকতা: লন্ডন থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পরও তাঁকে দেশের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলো-আপ এবং বিশেষ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হচ্ছে। এবারের ভর্তিও সেই ধারাবাহিক চিকিৎসারই অংশ।
বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা দেশের রাজনীতিতে এবং তাঁর দল বিএনপির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
একাধিক রোগ: দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যাসহ হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো জটিল ও আন্তঃসম্পর্কিত রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা বারবার তাঁর বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তাঁর শারীরিক অবস্থা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। তাঁর দ্রুত সুস্থতা তাঁর দলের নেতাকর্মীদের জন্য যেমন প্রেরণা, তেমনি জাতীয় রাজনীতিতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (কোট): “চেয়ারপারসন দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন যেন মহান আল্লাহ তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলেন। মেডিকেল বোর্ড তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থাকে গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছে।”
আশু আরোগ্যের প্রত্যাশা
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়ার বার্তাটি তাঁর শারীরিক অবস্থার প্রতি জনগণের সহমর্মিতাকে আরও গভীর করেছে। মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাঁর দীর্ঘদিনের জটিল রোগগুলোর চিকিৎসা প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জিং হলেও, তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলীয় সূত্র তাঁর আশু আরোগ্যের ব্যাপারে আশাবাদী। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা কেবল তাঁর পরিবারের জন্যই নয়, বরং তাঁর কোটি কোটি সমর্থক এবং দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও একান্ত কাম্য।
এম আর এম – ২৩৫৮,Signalbd.com



