
দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৯৪২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী দিনগুলোতে যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
সম্প্রদায় ও অঞ্চলে সংক্রমণ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে দুজন মারা গেছেন। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছেন। নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ৩০৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৪ জন, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় ২০৩ জন, খুলনা ৫৫ জন, ময়মনসিংহ ৩৩ জন, রংপুর ২৩ জন এবং সিলেটে ২ জন রয়েছেন।
নতুন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের অংশ সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এছাড়া নতুন আক্রান্তদের প্রায় ৬৪ শতাংশই পুরুষ।
ডেঙ্গুর ইতিহাস ও প্রভাব
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত (১ জানুয়ারি–২০ অক্টোবর) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে, যেখানে ১২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। চলতি বছরের মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৬০ হাজার ৭৯১।
ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতি বছরই বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এডিস মশার বিস্তার বৃদ্ধি পায়। গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ছিল। অক্টোবর মাসেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা চলমান বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্র পরিবেশের কারণে আশঙ্কাজনক।
স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতা জরুরি। পুকুর, জলাধার, বাসার আশপাশের জল জমা এবং মশার প্রজননস্থল সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন করা হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নিম্নচাপের কারণে আগামী সপ্তাহে আবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
স্কুল, কলেজ, অফিস এবং জনসমাগমস্থলে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং রোগীর সঠিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সক্রিয় করতে হবে। এছাড়া জনগণকে সচেতন করতে নিয়মিত জনসচেতনতা প্রচারণা চালানো হবে।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, জনগণ যদি নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে, তাহলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেশের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু এবং ৯৪২ জনের নতুন ভর্তি এ সংকটের মাত্রা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। সতর্কতা, সচেতনতা এবং সরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে এ রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এম আর এম – ১৮৬৮,Signalbd.com