স্বাস্থ্য

রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত করা যাবে ৫০ ধরনের ক্যান্সার

Advertisement

একটি নতুন রক্ত পরীক্ষার ফলাফল দেখিয়েছে, এটি ৫০টির বেশি ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করার সম্ভাবনা রাখে এবং শনাক্ত হওয়া ক্যান্সারের অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়েছে। গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, যদি পরীক্ষাটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে অনেক ক্যান্সার সময়েই ধরা পড়ে চিকিৎসার সফলতা বাড়তে পারে — তবে মৃত্যুহারের ওপর কার্যকর প্রভাব এখনও নিশ্চিত নয়।

গবেষণার মৌলিক প্রতিবেদন ও পরীক্ষার পরিচিতি

এই ‘মাল্টি-ক্যান্সার অর্চন ডিটেকশন’ (MCED) রক্ত পরীক্ষা তৈরি করেছে GRAIL নামের বায়োটেক কোম্পানি। কোম্পানির এবং ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, Galleri নামে পরিচিত এই টেস্ট রক্তে টিউমার-উৎপন্ন কোষের ক্ষুদ্র DNA অংশ (cfDNA) শনাক্ত করে এবং সম্ভাব্য ক্যান্সারের উৎসস্থলও নির্দেশ করতে পারে। গবেষণায় যে ফলাফল দেখানো হয়েছে তা একাধিক দেশের বড় ক্লিনিকাল ডেটার ওপর ভিত্তি করে পাওয়া। 

ট্রায়ালের পরিসর ও মূল ফলাফল

উত্তর আমেরিকা ও কানাডায় পরিচালিত একটি পর্যবেক্ষণধর্মী স্টাডিতে প্রায় ২৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারীকে এক বছর ধরে দেখা হয়েছে। এতে প্রায় এক শতাংশ অংশগ্রহণকারীর রক্তে ‘পজিটিভ’ সিগন্যাল পাওয়া গেছে এবং এই পজিটিভদের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ ক্ষেত্রে পরে ক্যানসার নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শনাক্তকৃত ক্যান্সারের অর্ধেকের বেশি ছিল প্রাথমিক স্টেজে। এ ছাড়া পরীক্ষাটি প্রাথমিকভাবে ক্যানসারের উৎস নির্ধারণে উচ্চ সঠিকতা দেখিয়েছে। 

কোন ধরণের ক্যানসার শনাক্ত করা যাচ্ছে?

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই টেস্ট অন্তর্ভুক্ত করে ৫০টিরও বেশি ক্যানসার — বিশেষত ডিম্বাশয়, লিভার, পাকস্থলী, মূত্রথলি ও অগ্ন্যাশয় মতো এমন ক্যানসার, যেগুলোর জন্য এখনো নিয়মিত স্ক্রিনিং নেই। ঐ ধরনের ক্যানসারগুলো সাধারণত প্রতিকূল উপসর্গও পরে প্রকাশ করে, ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরাটা কঠিন। Galleri এই ধরনের অনেকে শনাক্ত করার দাবি করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে উৎসস্থল (Cancer Signal Origin) সঠিকভাবে নির্ধারণও সম্ভব হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা ও বিজ্ঞানগত প্রশ্ন

যদিও ফলাফল প্রতিশ্রুতিশীল, তবু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী রয়েছে। প্রধানত—এই পরীক্ষার ব্যবহার মৃত্যুহার (mortality) কমায় কি না, সেটি বড় ও র‍্যান্ডমাইজড ট্রায়ালে প্রমাণিত হতে হবে। অতিরিক্ত রোগ নির্ণয়ের (overdiagnosis) ঝুঁকি, অনাকাঙ্ক্ষিত অন্বেষণমূলক পরীক্ষা এবং মানসিক প্রভাব নিয়েও সতর্ক করা হয়েছে। ক্যান্সার গবেষণা সম্প্রদায় বলছে, দীর্ঘমেয়াদি ডেটা ও র‍্যান্ডমাইজড স্টাডি ছাড়া পরীক্ষার কার্যকারিতা ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হবে।

ব্যাপক ট্রায়াল ও NHS-এর উদ্যোগ

যুক্তরাজ্যের NHS এই প্রযুক্তি নিয়ে বড় ট্রায়াল চালাচ্ছে; তিন বছরের এনএইচএস-গ্যালারি ট্রায়লে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, যা এই পরীক্ষার দক্ষতা ও জনস্বাস্থ্যগত প্রভাব মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের বড় র‍্যান্ডমাইজড ট্রায়াল থেকে মৃত্যুহার ও অর্থনৈতিক দিকগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

রোগনির্ণয় থেকে চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত

যদি টেস্টটি নানা দেশে সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে অনেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার জানতে পারবে—যেখানে চিকিৎসা তুলনামূলকভাবে সহজ ও কার্যকর। তবে একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও রোগ নির্ণয়ের পরবর্তী পর্যায়গুলোকে (diagnostic workup) সক্ষম করে তোলা জরুরি, যাতে অপ্রয়োজনীয় ইনভেসিভ পরীক্ষা ও সম্পদ অপচয় না হয়। কোম্পানির রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরীক্ষার সাহায্যে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অনাগরিক অপব্যবহার কমিয়ে কার্যকর ডায়াগনস্টিক প্রক্রিয়া সাজানো সম্ভব। 

নতুন রক্ত পরীক্ষার ফলাফল ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ে একটি সম্ভাবনাময় অধ্যায় সূচিত করেছে—বিশেষত যেসব ক্যান্সারের এখনো কার্যকর স্ক্রিনিং নেই। তবে জনস্বাস্থ্য নীতিমালা গঠনে, দীর্ঘমেয়াদি মৃত্যুহারের ওপর প্রভাব, অর্থনৈতিক মূল্যায়ন ও অতিরিক্ত রোগ নির্ণয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে পরিপূর্ণ প্রমাণ প্রয়োজন। আগামী এসএসও/ট্রায়ালগুলোর ফল বিকাশের ওপর নির্ভর করবে এই প্রযুক্তির বাস্তব দৌড় এবং বিশ্ববিস্তারের সম্ভাবনা। 

এম আর এম – ১৮২৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button