স্বাস্থ্য

হাই প্রেশারে লবণ খাওয়া বন্ধ? না খেলে কী ঘটে শরীরে

Advertisement

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশারে লবণ খাওয়া কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয় অনেক সময়। তবে লবণ পুরোপুরি বাদ দেওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লবণ শরীরে তরল ভারসাম্য, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত লবণ ক্ষতিকর হলেও, একেবারে লবণ খাওয়া বন্ধ করলে শরীরের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লবণ এবং শরীরের ভূমিকা

শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য লবণ বা সোডিয়াম অপরিহার্য। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম এবং গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ও হরমোনের কাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ না থাকলে শরীরের তরল ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং বিপাক ক্রিয়া ধীরগতিতে চলে। ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসকরা বলেন, লবণ কেবল খাওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, বরং এটি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট শরীরে তরল নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি শোষণ এবং বর্জ্য অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লবণ খাওয়া বাদ দিলে শরীরে কী কী সমস্যা হতে পারে

১. পেশি দুর্বলতা ও খিঁচুনি
লবণ বা সোডিয়ামের অভাব পেশির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। একেবারে লবণ না খেলে পেশি দুর্বলতা, খিঁচুনি ও অপ্রত্যাশিত স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

২. ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা
লবণ শরীরের পানিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। লবণ না খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে, যা কিডনি ও হৃদপিণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

৩. বিপাকক্রিয়ায় বাধা
লবণের অভাবে শরীরের বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়। হরমোন ও এনজাইমের কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে পুষ্টি শোষণ, শক্তি উৎপাদন ও শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

৪. রক্তচাপের পার্থক্য
একটি চা চামচের কম লবণ খাওয়া হলে রক্তচাপের পার্থক্য সহজে লক্ষ্য করা যায়। হাই প্রেশারের রোগীরা লবণ কমানোর চেষ্টা করলেও একেবারে বাদ দেওয়া বিপজ্জনক।

লবণের সঠিক পরিমাণ ও স্বাস্থ্য

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক লবণের চাহিদা প্রায় ৫–৬ গ্রাম। এই পরিমাণ শরীরের জন্য যথেষ্ট এবং হাই প্রেশারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তবে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনি সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য আলাদা পরামর্শ প্রযোজ্য।

খাবার প্রস্তুতিতে লবণ ব্যবহার করা যায় পরিমিতভাবে। তাজা সবজি, ফল এবং হালকা প্রসেসড খাবারে পর্যাপ্ত লবণ থাকে। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এবং সোডা কমানো ভালো।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ডায়েটিশিয়ানরা বলেন, “লবণ শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। একেবারে বাদ দিলে শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমে জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক পরিমাণে লবণ গ্রহণ করলে হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে।”

চিকিৎসকরা আরও বলেন, হাই প্রেশার রোগীরা যদি লবণ পুরোপুরি না খায়, তবে তারা ডিহাইড্রেশন, পেশির সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই লবণকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া নয়, বরং স্বাস্থ্যসম্মত সীমার মধ্যে রাখা জরুরি।

লবণ ব্যবহারে টিপস

  • খাবারে লবণ পরিমিত ব্যবহার করুন
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার ও প্যাকেটজাত স্ন্যাকস কম খান
  • লেবু, মশলা ও হার্বস দিয়ে স্বাদ বাড়ান
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন
  • সবজি, ফল ও প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন

লবণ হাই প্রেশারের জন্য সংযমের বিষয় হলেও একেবারে বাদ দেওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। পেশি, স্নায়ু, হরমোন এবং শরীরের তরল ভারসাম্য ঠিক রাখতে লবণ অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিমাণে লবণ খাওয়াই স্বাস্থ্যকর এবং হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

এম আর এম – ১৭০৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button