স্বাস্থ্য

ঢাকা জেলায় ১০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার লক্ষ্য

Advertisement

আগামী ১২ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হচ্ছে ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি, যার মধ্যে ঢাকা জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো টাইফয়েড জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা, সংক্রমণ কমানো এবং শিশুদের জীবন রক্ষা করা। ঢাকা জেলায় এই কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪২ জন শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, “এই টিকাদান কর্মসূচিতে নিবন্ধিত শিশুদের পাশাপাশি যারা এখনও নিবন্ধন করেনি তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য একটি শিশুও বাদ না যাক।”

কর্মসূচির সময়সীমা ও প্রস্তুতি

টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি চার সপ্তাহব্যাপী চলবে। কর্মসূচি চলাকালীন শিশুদের টিকা দেওয়া হবে স্থায়ী কেন্দ্র এবং অস্থায়ী ক্যাম্পে। ঢাকা জেলায় ইতিমধ্যেই ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৭ জন শিশু টিকাপ্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন করেছে। তবে কর্মসূচির প্রথম দিনে ও চলাকালীন সময়ে আরও শিশুরা নিবন্ধন করতে পারবে।

ডা. জিল্লুর রহমান আরও জানিয়েছেন, “আমরা আশা করি নিবন্ধনের হার আরো বাড়বে। টিকাদান কর্মসূচি প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং কোনো শিশু বাদ না পড়ুক সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।”

টিকার গুরুত্ব ও নিরাপত্তা

টাইফয়েড জ্বর এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যা খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এটি untreated হলে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং শিশুদের জন্য জীবনহানির ঝুঁকি বহন করে। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে এই সংক্রমণ কমানো এবং শিশুরা নিরাপদ থাকবে।

ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, “টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং হালাল। শিশুরা একমাত্র এক ডোজের মাধ্যমে সুরক্ষা পাবে। যেকোনো ধরনের অসুস্থতা বা টিকাপ্রতিক্রিয়া হলে তা কেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা দ্বারা মোকাবিলা করা হবে।”

টিকা গ্রহণের প্রক্রিয়া

টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের টিকা দেওয়ার সময় তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি যাচাই করা হবে। যদি কোনো শিশু জ্বর, বমি, এলার্জি বা অন্যান্য অসুস্থতায় ভুগছে, তবে সেই শিশুকে পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।

নিবন্ধিত শিশুরা সহজেই তাদের টিকা কেন্দ্রে পৌঁছে নিতে পারবে। যেসব শিশু এখনও নিবন্ধন করেনি, তারা স্থানীয় টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে নাম, বয়স এবং অন্যান্য তথ্য প্রদান করে টিকা নিতে পারবে।

বিশেষ উদ্যোগ: ভাসমান ও পথ শিশুরা

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য একটি উদ্যোগ হলো ভাসমান এবং পথ শিশুদের জন্য বিশেষ টিকা ক্যাম্প। এটি নিশ্চিত করবে যে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরও টিকা দেওয়া হবে এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, “আমরা চাই কোনো শিশুই টিকা থেকে বাদ না পড়ুক। বিশেষ ক্ষেত্রে, অসুস্থতা বা অন্যান্য জটিলতার কারণে যারা বাদ পড়ে যাবে তারা পরবর্তীতে স্থায়ী কেন্দ্রে এসে তাদের টিকা নিতে পারবে।”

জনসচেতনতা এবং প্রচারণা

টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে জনসচেতনতা অপরিহার্য। সিভিল সার্জনের অফিস থেকে স্থানীয় কমিউনিটি, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু হয়েছে। মা-বাবাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা তাদের শিশুদের নিশ্চিতভাবে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে আসুন।

প্রচারণার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীরা মোবাইল ভ্যান ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করছেন। এতে প্রত্যেক পরিবার জানতে পারছে, কখন এবং কোথায় তাদের শিশু টিকা নিতে পারবে।

টাইফয়েড রোগ এবং এর ঝুঁকি

টাইফয়েড জ্বর মূলত ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলা টাইফির কারণে হয়ে থাকে। এটি সংক্রমিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। শিশুদের মধ্যে রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, কারণ তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি।

টাইফয়েড untreated হলে দীর্ঘমেয়াদে অন্ত্রের জটিলতা, উদর ব্যথা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। টিকা প্রদান এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায় এবং শিশুদের নিরাপদ রাখে।

টিকার কার্যকারিতা ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর। একমাত্র ডোজেই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ঢাকা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগও এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে। তারা নিশ্চিত করছে যে প্রতিটি শিশুর টিকাদান সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।

স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা

কর্মসূচিতে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা একসাথে কাজ করছেন। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামের, শহরের এবং অগোছালো এলাকায় পৌঁছে শিশুরা যাতে টিকা পান তা নিশ্চিত করছেন।

ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, “এই কার্যক্রম শুধু সরকারের উদ্যোগ নয়, এটি সমগ্র সমাজের যৌথ প্রচেষ্টা। প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, স্বেচ্ছাসেবী এবং অভিভাবক একসাথে কাজ করলে আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।”

ঢাকা জেলা সহ দেশের সব জেলায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। একমাত্র টিকা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি কমানো সম্ভব এবং দীর্ঘমেয়াদে জাতির স্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখা যাবে।

মা-বাবাদের প্রতি ডা. জিল্লুর রহমানের বিশেষ অনুরোধ, “দয়া করে আপনার শিশুদের টিকা কেন্দ্রে নিয়ে আসুন। এটি আপনার শিশুর নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। কোনো শিশুও যেন বাদ না পড়ে।”

MAH – 13247 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button