স্বাস্থ্য

ঢাকা উত্তরে ১৩ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেবে ডিএনসিসি

Advertisement

টাইফয়েড প্রতিরোধে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) রাজধানীর প্রায় ১৩ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে গুলশান নগর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “টাইফয়েড একটি মারণব্যাধি সংক্রামক রোগ। এটি দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রতিবছর বাংলাদেশে হাজার হাজার শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডিএনসিসি এবার বিশাল পরিসরে টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।”

টিকাদান কর্মসূচি কবে শুরু হবে?

ডিএনসিসি জানায়, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চলবে এই টিকাদান ক্যাম্পেইন। এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিশেষ বুথ, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে।

  • লক্ষ্য শিশু: ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের মধ্যে থাকা শিশুরা
  • টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত
  • টিকা নেওয়ার পর কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস জানান, “আমরা চাই না কোনো শিশু টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে জীবন হারাক। তাই অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান, আপনার সন্তানকে এই টিকা নিতে নিয়ে আসুন। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করবে।”

কেন টাইফয়েড টিকা প্রয়োজন?

টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। মূলত দূষিত পানি, অপরিষ্কার খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় বলে বিভিন্ন গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন:

  • চিকিৎসা না নিলে টাইফয়েড প্রাণঘাতী হতে পারে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ছে।
  • টিকা নেওয়ার মাধ্যমে এই রোগকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞ মতামত

ডা. সেলিনা আক্তার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন—
“টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। শিশুরা যদি একবার এই টিকা নেয়, তারা অন্তত কয়েক বছরের জন্য সুরক্ষিত থাকবে। ফলে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি।”

ডিএনসিসির অন্যান্য স্বাস্থ্য উদ্যোগ

ডিএনসিসি শুধু টাইফয়েড নয়, রাজধানীবাসীকে অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকেও সুরক্ষিত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ডেঙ্গু প্রতিরোধ

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তির চাপও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে—

  • প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিনিধি পাঠানো হবে।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
  • কোথায় কী পরিমাণ রোগী বাড়ছে তার ওপর ভিত্তি করে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
  • প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস বলেন

“টাইফয়েডের পাশাপাশি ডেঙ্গু আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা চাই ঢাকাবাসীকে এই দুই সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত রাখতে। এজন্য নিয়মিত ফগিং, লার্ভা ধ্বংস কার্যক্রম এবং সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্য ও গুরুত্ব

এই কর্মসূচি সফল হলে রাজধানীর ১৩ লাখ শিশুকে টাইফয়েড থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়বে।

কারণ:

  1. টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমবে।
  2. স্বাস্থ্য ব্যয় কমবে।
  3. স্কুলপড়ুয়া শিশুদের উপস্থিতি বাড়বে।
  4. জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

কীভাবে টিকা দেওয়া হবে?

ডিএনসিসি জানিয়েছে—

  • প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
  • প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন করবেন।
  • অভিভাবকরা জাতীয় পরিচয়পত্র বা শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিয়ে আসলেই টিকা দেওয়া হবে।
  • টিকা দেওয়ার পর শিশুর হাতে একটি কার্ড দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যৎ তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

অভিভাবকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা

  1. শিশু সুস্থ থাকলে টিকা দিন।
  2. টিকা নেওয়ার পর হালকা জ্বর হতে পারে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
  3. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।
  4. টিকা নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর্মীর দেওয়া পরামর্শ মেনে চলুন।

বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য

বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বের কাছে টিকাদান কর্মসূচির সফলতার জন্য প্রশংসিত। পোলিও, হাম, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি প্রতিরোধে দেশ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এবার টাইফয়েড টিকা সংযোজন সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বহন করবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান—
“বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা করছিল। ডিএনসিসির এই উদ্যোগ সেটিকে বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ডিএনসিসি জানিয়েছে, আগামী দিনে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনেও এই কর্মসূচি চালু করা হবে। একইসঙ্গে স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম, পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন রাজধানীর ১৩ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। একইসঙ্গে ডিএনসিসি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কর্মসূচি সফল হলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা আরও জোরদার হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংক্রামক রোগ থেকে অনেকটা মুক্ত থাকবে।

MAH – 13233 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button