
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অসুস্থ গরুর মাংস কাটাকাটির পর ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি, বাকিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থানীয়ভাবে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে অসুস্থ একটি গরু জবাইয়ের পর অন্তত ১১ জন মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, আর বাকিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে। আক্রান্তদের শরীরে ফোসকা, ঘা এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
কীভাবে ঘটল সংক্রমণ
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশামত সদর গ্রামের বাসিন্দা মাহবুর রহমানের একটি অসুস্থ গরু বাজারদরের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। গ্রামের কয়েকজন মিলে গরুটি জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করেন। মাংস কাটাকাটিতে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে জবাইয়ের কয়েকদিন পর থেকেই অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্তদের হাত, নাক-মুখ ও চোখের চারপাশে ফোসকা ও ক্ষত তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে গুরুতর আকার ধারণ করে।
আক্রান্তদের অবস্থা
প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠায় তাদের গাইবান্ধার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মাহবুর রহমান, মোজাফফর হোসেন, মোজাম্মেল হক ও শফিকুল ইসলামের অবস্থাকে চিকিৎসকরা সংকটজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বাকিরা তুলনামূলক হালকা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পদক্ষেপ
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে জানান, আক্রান্ত পশু জবাই এবং সেখান থেকে মাংস বেচাকেনার কারণে এ ধরনের সংক্রমণ ঘটে। ঘটনাটি জানার পর এলাকায় প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে যাতে মানুষ অসুস্থ পশু জবাই না করে। তিনি আরও জানান, উপজেলায় ইতোমধ্যে ২৬ হাজারের বেশি ভ্যাকসিন এসেছে, যার মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত পশু জবাইয়ের দায়ে একজনকে জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, আক্রান্তদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সবাইকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অ্যানথ্রাক্স কী এবং কেন ভয়াবহ
অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা মূলত গবাদিপশুতে দেখা যায়। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে মানুষও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ত্বকে ফোসকা, ক্ষত এবং মারাত্মক সংক্রমণ ছাড়াও এটি ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে।
অতীত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান সতর্কতা
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ পশু জবাই ও মাংস খাওয়ার কারণে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য সরকার ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি চালালেও সচেতনতার অভাব এবং লোকসানের ভয়ে অসুস্থ পশু জবাইয়ের প্রবণতা বন্ধ করা যায়নি।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনার পর সুন্দরগঞ্জের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন গরুর মাংস খেতে ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, অসুস্থ পশু জবাইয়ের ব্যাপারে কঠোর নজরদারি এবং ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও পশু জবাইয়ের নিয়ম নিয়ে সচেতনতা না বাড়ালে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং জনগণকে অসুস্থ পশু জবাই থেকে বিরত রাখতে হবে। একই সঙ্গে আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরি, কারণ দেরি হলে সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে।
গাইবান্ধার ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, অসুস্থ পশু জবাই মানুষের জন্য কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং এলাকায় সচেতনতা বাড়ানো এখন জরুরি। প্রশ্ন উঠছে, এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো আর কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে?
এম আর এম – ১৬১০,Signalbd.com