
বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন গুরুতর অসুস্থ। দীর্ঘ সাত মাস ধরে ব্রেন টিউমারে ভুগছেন তিনি এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন লন্ডনে। বুধবার (১ অক্টোবর) নিসচা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে মিরাজুল মইন জয়।
চিকিৎসার সর্বশেষ খবর
মিরাজুল মইন জানান, বছরের শুরুতে হঠাৎ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে শুরু করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। বিশেষ করে কথা বলার সময় অসুবিধা, ভুলে যাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়। পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠলে গত ৯ এপ্রিল তাকে ঢাকার ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রায় ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে করা হয় এমআরআই। রিপোর্টে দেখা যায়, তার মস্তিষ্কে একটি টিউমার রয়েছে। পরে চিকিৎসকরা জানান, টিউমারটি মস্তিষ্কের গভীরে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়বিক সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা সরাসরি অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়।
লন্ডনে চিকিৎসা প্রক্রিয়া
১৩ এপ্রিল জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার চেষ্টা করা হলেও পরবর্তীতে পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় লন্ডনে নিয়ে যাবার। গত ২৬ এপ্রিল তিনি লন্ডনে পৌঁছান এবং সেখানকার হারলি স্ট্রিট ক্লিনিকে তিন মাস ধরে একাধিক বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষানিরীক্ষা চলে।
অবশেষে ৫ আগস্ট লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালে প্রফেসর ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, পুরো টিউমার অপসারণ ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আংশিকভাবে অপারেশন করা হয়েছে। বাকি অংশ রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে মিরাজুল মইন জয় জানান, “আমার বাবার অবস্থার উন্নতি ধীরে হলেও হচ্ছে। ডাক্তাররা আশা করছেন, নিয়মিত চিকিৎসা চালালে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় নিতে পারে। আমরা সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চাইছি।”
এছাড়া তিনি জানান, চলতি মাসেই রেডিয়েশন থেরাপি শুরু হওয়ার কথা। চিকিৎসকরা কাঞ্চনের শারীরিক শক্তি ও মানসিক প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন।
ইলিয়াস কাঞ্চনের ক্যারিয়ার ও অবদান
৮০ এবং ৯০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ৩৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত অনেক সিনেমাই ছিল ব্লকবাস্টার। শুধু চলচ্চিত্রেই নয়, সামাজিক আন্দোলনেও তার ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়।
১৯৯৩ সালে স্ত্রী ঝুমুরের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তিনি “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন আজও বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা
এর আগেও ইলিয়াস কাঞ্চন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বয়সজনিত কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তবে এবার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ায় পরিবার ও ভক্তরা নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ভক্ত ও সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া
সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই তার সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন। অভিনেতা ও পরিচালকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভকামনা জানিয়েছেন।
অভিনেত্রী শাবনূর লিখেছেন, “ইলিয়াস ভাই আমাদের গর্ব। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।” জনপ্রিয় পরিচালক মালেক আফসারী বলেন, “বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার অবদান অনন্য। আমি নিশ্চিত তিনি আবারও সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
চিকিৎসকদের মতামত
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ব্রেন টিউমার চিকিৎসায় সময়সাপেক্ষ হলেও সঠিক যত্ন ও ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। ইলিয়াস কাঞ্চনের ক্ষেত্রে টিউমার আংশিক অপসারণ হওয়ায় এখন রেডিয়েশন থেরাপি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সামনে কী হতে পারে
ইলিয়াস কাঞ্চনের সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে তারা ইতিবাচক ফলাফল আশা করছেন। ভক্তদের অনুরোধ করা হয়েছে গুজব না ছড়িয়ে কেবল চিকিৎসার সঠিক তথ্য মেনে চলতে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সামাজিক আন্দোলনের এই কিংবদন্তি অভিনেতার সুস্থতা এখন জাতির প্রার্থনার বিষয়। সবাই আশা করছে, শিগগিরই তিনি আবারও পর্দায় ও সামাজিক অঙ্গনে সক্রিয় হবেন।
এম আর এম – ১৫৯৭,Signalbd.com