
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত এই রোগে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৫৫৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
হাসপাতালে ভর্তির সর্বশেষ চিত্র
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০১ জন, দক্ষিণ সিটিতে ১১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পর্যায়ে বরিশালে ১৩৭ জন, চট্টগ্রামে ৭০ জন, ময়মনসিংহে ২৮ জন, রাজশাহীতে ২৫ জন, সিলেটে ৩ জন এবং ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় ৭৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১২ জন রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ৪৪ হাজার ৭৯৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।
চলতি বছরের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ হাজার ৩৪২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
একই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৮ জনে। জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন, জুনে ১৯ জন, জুলাইয়ে ৪১ জন, আগস্টে ৩৯ জন এবং সেপ্টেম্বরে এ পর্যন্ত ৭৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
রাজধানীতে ডেঙ্গুর চাপ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকাই ডেঙ্গুর কেন্দ্রবিন্দু। ঘনবসতি, জলাবদ্ধতা এবং আবর্জনার স্তুপ এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। ঢাকা মহানগরীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিনই নতুন রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা
এ বছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে। এই মাসে একাই ১৫ হাজার ৩১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৩ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার শেষভাগ এবং শরতের শুরুতে এডিস মশা সবচেয়ে দ্রুত বংশবিস্তার করে। ফলে সেপ্টেম্বর মাসে রোগীর সংখ্যা অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।
সরকারি ও বিশেষজ্ঞদের করণীয়
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ৪০৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৮৩২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৫৭৫ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশক নিধন কার্যক্রমে আরও সমন্বয় জরুরি। পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বাসাবাড়ির টব, টায়ার, খালি ক্যান, ড্রাম বা পানির পাত্রে জমে থাকা স্থির পানি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এডিস মশার লার্ভা দ্রুত ছড়ায়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা
চিকিৎসকরা মনে করেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই কার্যকর সমাধান। মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে এবং ঘরের ভেতরে-বাইরে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করা জরুরি, যাতে রোগ শনাক্ত করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া যায়।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। সঠিক সময়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এম আর এম – ১৫৮৭,Signalbd.com