ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুখবর: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে এখন বিনা খরচে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে

ডিজিটাল মাধ্যমে চালু হলো ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’ সেবা

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এসেছে এক যুগান্তকারী ব্যাংকিং সেবা। বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য চালু করেছে একটি বিশেষ হিসাব—‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’। এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোনো খরচ নেই, এবং সবকিছুই সম্পন্ন হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, ঘরে বসেই।

এই বিশেষ সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন পেশাজীবীদের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও সহজ, আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হলো।

কী থাকছে ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’-এ?

নতুন এই অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে একজন ফ্রিল্যান্সারের নামে খুলে যাবে দুটি হিসাব:

  1. বিদেশি মুদ্রা হিসাব (Foreign Currency Account)
  2. বাংলাদেশি টাকা হিসাব (BDT Account)

ফ্রিল্যান্সাররা তাঁদের আয়ের ৩৫% অর্থ বিদেশি মুদ্রায় এবং বাকি ৬৫% টাকা হিসেবে রাখতে পারবেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ও খরচ—উভয়ই হবে আরও সহজ।

এছাড়াও থাকছে—

  • বিনা মাশুলে ডেবিট কার্ড (দেশ–বিদেশে খরচ উপযোগী)
  • বিনামূল্যে অনলাইন ফর্ম সি পূরণ
  • দেশি ও বিদেশি এটিএমে টাকা তোলার সুবিধা
  • ব্যক্তিগত ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা
  • অ্যাকাউন্ট মেইনটেন্যান্স ফি নেই (শুধু সরকারি কর প্রযোজ্য)

কীভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে?

এই অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনো ফিজিক্যাল ব্রাঞ্চে যেতে হবে না। একজন ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
সাধারণত প্রয়োজন হবে—

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • বৈধ ফ্রিল্যান্সিং ইনকামের প্রমাণ (যেমন: Upwork, Fiverr, Freelancer ইত্যাদির প্রোফাইল স্ক্রিনশট বা আয় সংক্রান্ত ডকুমেন্ট)

সেবা চালুর ঘোষণা এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতি

আজ রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—

  • লুৎফুল হাবিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিটেইল ব্যাংকিং প্রধান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড
  • বিটপী দাশ চৌধুরী, কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং
  • ডা. তানজিবা রহমান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (BFDS)
  • বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যাংক কর্মকর্তারা

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অঙ্গীকার

অনুষ্ঠানে বিটপী দাশ চৌধুরী জানান,

“স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ১২০ বছর ধরে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন ব্যাংকিং সেবা ডিজিটাল হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারদের কাজের ধরন বিবেচনায় নিয়ে নতুন এই ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট চালু করা হলো।”

ব্যাংকটির রিটেইল ব্যাংকিং প্রধান লুৎফুল হাবিব বলেন,

“আমরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনার অন্যতম উৎস—ফ্রিল্যান্সারদের পাশে থাকতে চাই। ভারতের পর বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি ফ্রিল্যান্সিং আয় হয়। এই খাতের সম্ভাবনা বিশাল।”

তিনি আরও জানান, ব্যাংকের ৭০% গ্রাহক ইতোমধ্যে ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করছেন, ফলে ব্রাঞ্চে সরাসরি উপস্থিতি ৪৫% কমে গেছে।

দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চিত্র ও সমস্যা

বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সাড়ে ১০ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। বছরে ব্যাংক চ্যানেলে আসে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স। তবে এই আয়ের মাত্র ৩০% ব্যাংকের মাধ্যমে আসে, কারণ অনেক ব্যাংক এখনো যথাযথ সেবা দিতে পারছে না।

ডা. তানজিবা রহমান বলেন,

“দেশের ফ্রিল্যান্সাররা কোটি কোটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন। অথচ ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অনেক সময় ভোগান্তি হয়। এখন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো ব্যাংক এগিয়ে এলে এ পেশায় আগ্রহ বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন,

“এআইয়ের (Artificial Intelligence) কারণে ভবিষ্যতে অনেক চাকরি হারিয়ে যাবে, তবে এআইয়ের পেছনে কাজ করতে প্রচুর মানুষের প্রয়োজন হবে—ফ্রিল্যান্সারদের ভবিষ্যৎ তাই উজ্জ্বল।”

অন্যান্য ব্যাংক পিছিয়ে কেন?

অনুষ্ঠানে ব্যাংকের আমানত বিভাগের প্রধান নাভিদ হাসান বলেন,

“দেশের আর কোনো ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এমন বিস্তৃত ও ফ্রি সেবা নেই। বিদেশি ব্যাংক হয়েও আমরা স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় এই উদ্যোগ নিয়েছি।”

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ?

এই সেবাটি শুধু একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নয়, বরং—

  • ফ্রিল্যান্সারদের পেশাদার পরিচয় নিশ্চিত করা
  • ব্যাংকিং সিস্টেমে তাদের আস্থা বাড়ানো
  • আয় কর-নির্ভরতামূলধনী বাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানো

ফ্রিল্যান্সারদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’ চালুর মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি—ফ্রিল্যান্সাররা পেলেন একটি সহজ, আধুনিক ও সম্মানজনক ব্যাংকিং মাধ্যম। দেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তাদের আয়ের পথ আরও মসৃণ করতে এই ধরণের উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী।

এই ধরণের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা শুধু ফ্রিল্যান্সারদেরই নয়, পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করে তুলবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন
Back to top button