অর্থনীতি

ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে দেশটিতে এ দুই গুরুত্বপূর্ণ ধাতব পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। আগামী বুধবার থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, “এই পদক্ষেপ আমাদের জাতীয় সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আমাদের দেশীয় ইস্পাত শিল্পকে চাঙ্গা করবে। একই সঙ্গে এটি চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর একটি কার্যকর উপায়।”

পিটসবার্গে ঘোষণা: দেশীয় উৎপাদনে ১৪ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বিনিয়োগ

গতকাল পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে এক নির্বাচনী সমাবেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, মার্কিন ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস স্টিল এবং জাপানের নিপ্পন স্টিল একটি অংশীদারত্বের মাধ্যমে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারে এ অঞ্চলের ইস্পাত খাতে।

যদিও এখন পর্যন্ত এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি, তবুও ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, এটি ইস্পাত খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

ইস্পাতশিল্প কর্মীদের জন্য আশ্বাস ও বোনাস ঘোষণা

ট্রাম্প বলেন, “আমার প্রেসিডেন্সির সময় কোনো ইস্পাতকর্মী ছাঁটাই হবেন না। কোনো আউটসোর্সিং হবে না। বরং, প্রত্যেক ইস্পাত শ্রমিক ৫ হাজার ডলারের বোনাস পাবেন খুব শিগগির।”

সমাবেশে উপস্থিত থাকা ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্য জোজো বারগেস বলেন, “এটা আমাদের জন্য অসাধারণ একটি দিন। ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ নতুন প্রজন্মের ইস্পাত কর্মীদের সুযোগ করে দেবে।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প যখন প্রথমবার ইস্পাতের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন আমরা বেশ ভালো আয় করেছিলাম। এ সিদ্ধান্ত আবার আমাদের সেই স্বর্ণালী দিন ফিরিয়ে আনবে।”

চীন, কানাডা এবং বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই তিনি আগের মতোই আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির দিকে ঝুঁকেছেন। চীন, কানাডা এবং অন্যান্য দেশের আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

এর আগেও ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা চীনের ওপর আমাদের ইস্পাত সরবরাহ নির্ভরশীল থাকতে পারি না। আমাদের নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ধাতবপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং বৈশ্বিক বাজারে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।

পূর্ব অভিজ্ঞতা: ২০১৮ সালের প্রথম মেয়াদে শুল্ক বাড়ানো

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো ইস্পাত আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত শিল্প টিকে থাকলে, দেশের নিরাপত্তা টিকে থাকবে।”

তখনও তিনি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এবারে তা বাস্তব রূপ পেল।

আদালতের বাধা সত্ত্বেও ট্রাম্পের অগ্রগতি

গত সপ্তাহে পাল্টা শুল্ক স্থগিত করে মার্কিন আদালত একটি রায় দিয়েছিল, যেটিকে ট্রাম্প “খুবই রাজনৈতিক এবং ভয়ানক সিদ্ধান্ত” বলে আখ্যায়িত করেন। এরপরই ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে আরও কঠোর হন এবং এই নতুন শুল্কের ঘোষণা দেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ইস্পাতশিল্পের অনেক কর্মী ও শ্রমিক সংগঠন স্বাগত জানালেও আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়। অনেকে বলছেন, এটি মার্কিন অর্থনীতিকে স্বল্পমেয়াদে চাঙা করলেও, দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিভাজন ও উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে।

তবে একথা নিশ্চিত যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি আগের চেয়ে আরও বেশি স্বদেশপ্রীতিশীল এবং কৌশলগত হয়ে উঠছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button