এডিবি ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে

বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (Technical and Vocational Education and Training – TVET) খাতের উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ১৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই ঋণের মাধ্যমে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার ও এডিবি।
ঋণ চুক্তি ও তার গুরুত্ব
রোববার (৩ আগস্ট) ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং এই ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই অর্থায়ন বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার আধুনিকায়ন ও প্রসারের জন্য একটি মাইলফলক। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী তৈরির চাহিদা বেড়েই চলছে। এই ঋণের মাধ্যমে টিভিইটি খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা হবে।
পাঁচটি মূল প্রযুক্তি খাতে বিশেষ গুরুত্ব
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে এই প্রকল্পটি পাঁচটি প্রযুক্তি খাতের উপর কেন্দ্রিত।”
এই পাঁচটি প্রযুক্তি খাত হলো:
১. যান্ত্রিক (Mechanical)
২. ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক (Electronics and Electrical)
৩. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)
৪. নাগরিক (সিভিল) ইঞ্জিনিয়ারিং (Civil Engineering)
৫. খাদ্য ও কৃষি (Food and Agriculture)
এই খাতগুলোতে দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে, দেশের শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা ও মান উন্নত হবে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য হ্রাসে এডিবির ভূমিকা
হোয়ে ইউন জিয়ং আরও বলেন, “এই কর্মসূচি বাংলাদেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টির অগ্রাধিকারমূলক এজেন্ডাকে শক্তিশালী করবে। এটি দারিদ্র্য এবং সামাজিক বঞ্চনার মতো গুরত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ এখনও অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত। দক্ষ জনশক্তি তৈরি না হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই টিভিইটি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এই প্রকল্প সরকারের টিভিইটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যানের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আধুনিক শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ও মান উন্নয়ন
এডিবি জানিয়েছে, এই ঋণ থেকে দেশের সব শ্রেণির টিভিইটি শিক্ষকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো হবে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর শিক্ষকরা এই প্রশিক্ষণ পাবেন।
এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষাগত ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা সরাসরি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করবে। উদীয়মান প্রযুক্তির ওপর বিশেষ জোর দিয়ে শিক্ষকদের জন্য দক্ষতা উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচিত হবে।
প্রকল্পের প্রত্যাশিত প্রভাব
প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কমপক্ষে ১০ হাজার নতুন ও বিদ্যমান টিভিইটি শিক্ষক তাদের দক্ষতা বাড়াতে সক্ষম হবেন। এতে সরাসরি প্রভাব পড়বে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর।
এই কর্মসূচি টিভিইটি খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং দেশব্যাপী পেশাদার উন্নয়নের একটি ধারাবাহিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। এটি বাংলাদেশকে দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে টিভিইটি খাতের গুরুত্ব
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। নতুন শিল্প কারখানা, প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাত এবং কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়ন হচ্ছে। এগুলোতে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা অনেক বেশি।
সরকার টিভিইটি খাতে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই খাতে বিনিয়োগ দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এডিবির সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতার ইতিহাস
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে অবদান রেখে আসছে। বিভিন্ন অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তি খাতে তারা অর্থায়ন ও জ্ঞানভিত্তিক সহায়তা দিয়ে চলেছে।
২০১০ সাল থেকে টিভিইটি খাতে এডিবির সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ও এডিবির অর্থায়ন একত্রিত হয়ে দেশের যুবসমাজের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে।
দেশের দক্ষ জনশক্তির ভবিষ্যত
বিশ্বায়নের যুগে দক্ষ জনশক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা কঠিন। তাই বাংলাদেশের টিভিইটি খাতের আধুনিকায়ন ও বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। এই ঋণ ও প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু দক্ষই হবে না, তারা বৈশ্বিক বাজারে কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত হবে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের যুবসমাজ হবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার শক্তিশালী চালিকা শক্তি।
সারসংক্ষেপ
- বাংলাদেশ ও এডিবির মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর।
- কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) খাতে বিনিয়োগ।
- যান্ত্রিক, ইলেকট্রনিক্স, তথ্য প্রযুক্তি, নাগরিক ও কৃষিক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য।
- দারিদ্র্য ও বঞ্চনা মোকাবিলায় সহায়তা।
- ঢাকার বাইরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাড়িয়ে ১০ হাজার শিক্ষককে আধুনিকায়ন।
- ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর ইতিবাচক প্রভাব।
- বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি।
MAH – 12106 , Signalbd.com