নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা, কোন গ্রেডে কত বাড়ছে

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বহু প্রতীক্ষিত মহার্ঘ ভাতার নতুন হার চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ১ জুলাই ২০২৫ থেকে এটি কার্যকর হচ্ছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে সরকারি কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। নতুন ভাতা কাঠামো সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
কোন গ্রেডে কত মহার্ঘ ভাতা?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী:
- প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবেন ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা।
- দশম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মীরা পাবেন ২০ শতাংশ হারে এই ভাতা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এই হার নির্ধারণের বিষয়টি গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়। এ সিদ্ধান্ত অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন,
“সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সে প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রয়েছে। ইতোমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা করেছে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা চাই জুলাই থেকে যেন এই ভাতা কার্যকর করা যায় এবং যথাযথ হারে যাতে সবাই উপকৃত হন।”
বাতিল হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনা
নতুন মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে চালু হওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে এই বিশেষ প্রণোদনা চালু করেছিল তৎকালীন সরকার। কিন্তু নতুন সরকারের আর্থিক কাঠামোতে এই প্রণোদনার স্থায়ীত্ব রাখা সম্ভব হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মহার্ঘ ভাতা চালু হওয়ায় বিশেষ প্রণোদনার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।
পূর্ববর্তী প্রস্তাব ও কমিটির কার্যক্রম
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করেছিল:
- ১ম–৯ম গ্রেডে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ,
- ১০ম–২০তম গ্রেডে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা চালু করার।
জনপ্রশাসন সচিব তখন এই ভাতা জানুয়ারি ২০২৫ থেকেই কার্যকর করার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু বাজেট ঘাটতি এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়।
সরকারি কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া
সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই নতুন ভাতার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
ঢাকার এক প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বলেন,
“দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাম বেড়ে যাওয়ার চাপ সামলে যাচ্ছিলাম। নতুন ভাতা কিছুটা হলেও সেই চাপ লাঘব করবে।”
একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বলেন,
“২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পেলে পরিবারের মাসিক খরচ সামলাতে সুবিধা হবে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে যে পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে, তা মেটাতে এটাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মহার্ঘ ভাতা মূলত সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাসুদুর রহমান বলেন,
“মুদ্রাস্ফীতি যখন ৯-১০ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে, তখন ভাতা বৃদ্ধি জরুরি হলেও, বাস্তব আয় বাড়াতে হলে বেতন কাঠামোর নতুন সংস্কার দরকার।”
তিনি আরও বলেন,
“সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই ভাতা কয়েক মাসের মধ্যেই অকার্যকর হয়ে যাবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও চলছে। বিরোধীদল বলছে,
“এটা মূলত জনসন্তুষ্টি অর্জনের একটি কৌশল, কিন্তু এটি কর্মচারীদের প্রকৃত সমস্যার সমাধান নয়।”
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ভাতা বাস্তবায়নে যথেষ্ট পরিকল্পনা ও আর্থিক প্রস্তুতি রয়েছে।
উপসংহার
সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এই উদ্যোগের স্থায়ীত্ব ও কার্যকারিতা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর।
নতুন ভাতা বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।