অর্থনীতি

সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিটকয়েন

২২ মে, ২০২৫ (ঢাকা) – গ্লোবাল ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হলো, যখন বিটকয়েনের দাম প্রতিটি কয়েনের জন্য সর্ষটি করা রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় $১১০,৬৩৭–এর প্রায় সমীপে । গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি শেষে এই নতুন সর্বোচ্চ মূল্যে পৌঁছাতে মন্দ পরিস্থিতি থেকে পালটা বিনিয়োগের ধারা এবং কয়েকটি মৌলিক ঘটনা একযোগে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

কেন দাম ঊর্ধ্বগামী?

১. মার্কিন ঋণমানের হ্রাস

মুডিস ইন্টারন্যাশনাল রেটিং এজেন্সি মে মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান “এএএ” থেকে নামিয়ে “এএএ-“ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে । এই সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ডলারের পরিবর্তে প্রথাগত ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ হলেও উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এমন ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকছেন।

২. ঋণসীমা উত্তেজনা ও বাজেট নীতির দ্বন্দ্ব

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বহুল আলোচিত ব্যয় এবং করছাড় নীতি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার সম্মুখীন; এতে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ঘাটতি আরও বাড়বে কি না—এ নিয়ে শঙ্কা আছে Reuters। ডলার হ্রাস পাওয়ায় প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগকারীরা বিকল্প নিরাপত্তা হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।

৩. মার্কিন-বৈদেশিক বাণিজ্য উত্তেজনার অবনতি

মার্কিন-চীনা বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় ব্যপ্তির আশঙ্কা কমেছে; তবুও বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মনোভাব ক্রিপ্টোকারেন্সিকে রক্ষা করেছে ।

৪. প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও বিটকয়েন ইটিএফ প্রবাহ

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদিত মার্কিন বিটকয়েন ইটিএফ-এ এ ছুটির মধ্যে $৪ বিলিয়নেরও বেশি প্রবাহ হয়েছে । মাইক্রোসফট্রেটেজির মতো বড় প্রতিষ্ঠান $৭৬৫ মিলিয়ন বিনিয়োগ বাড়ানোর খবর এবং জেপিএমচেসের ক্রেডিট গ্রাহকদের জন্য বিটকয়েন সার্ভিস চালুর ঘোষণা—এসব ঘটনা বাজারে আত্মবিশ্বাস যোগিয়েছে ।

বাজারের প্রতিক্রিয়া ও ভলিউম

গত ২৪ ঘণ্টায় বিটকয়েনের ট্রেডিং ভলিউম প্রায় ৭২% বৃদ্ধি পেয়ে $৮৬.৬৫ বিলিয়ন ছুঁয়েছে । CoinMarketCap-এর তথ্যে দেখা যায়, সমগ্র বাজার মূলধন এখন প্রায় $২.১৯ ট্রিলিয়ন, যা ২০২৫ সালের শুরুর তুলনায় প্রায় দেড় গুন হয়েছে । এদিকে, গ্লোবাল বিনিয়োগকারীরা ‘ছিলেকথার’ মতো নিরাপদ মনে করে টোন করে আসা স্বর্ণেবিশেষ করে সম্পদের সহায়ক বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করছেন।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: সংকেত কী বলছে?

  • গোল্ডেন ক্রস: ৫০ দিনের গড় দাম গত ২০০ দিনের গড় দামের উপরে উঠে আসায় স্বর্ণের মতো গঠন করেছে, যা দীর্ঘমেয়াদি ঊর্ধ্বগামী ধারার ইঙ্গিত দেয় ।
  • ওভারবট মার্কেট: বিক্রয়ভলিউম কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় সঙ্কোচন দেখা দিয়েছিল, তবে সামগ্রিক সাপোর্ট লেভেল $১০৭,০০০ থেকে শুরু হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস কমেনি ।
  • মূল্য প্রতিরোধ: $১২০,০০০–এর দিকে যাতায়াতের সম্ভাবনা থাকলেও আগে $১০৭,০০০ এবং $৯২,০০০–এর স্তরে ঠেকা প্রতিরোধ পর্যবেক্ষণ করা উচিত ।

অন্যান্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সির গতি

  • ইথেরিয়াম (ETH): বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ইথেরিয়ামের দাম মাত্র ২.৫% বেড়ে $২,৬১৮–এ দাঁড়িয়েছে, বিটকয়েনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম সাড়া ।
  • বাইন্যান্স কয়েন (BNB): প্রায় ২% বৃদ্ধি পেয়ে $৬৮৬–এ লেনদেন হয়েছে ।

ঝুঁকি ও সতর্কতা

যদিও বিটকয়েনের বাজার মনোরম দৃশ্যপট দিচ্ছে, কয়েকটি ঝুঁকিও দৃশ্যমান:

  1. নিয়ন্ত্রক চাপ: বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারে।
  2. মূল্য স্ফিতি এবং কারেকশন: অতিরিক্ত দ্রুত ঊর্ধ্বগতি পরবর্তী সময়ে প্রবল পতনের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
  3. মনোভাব পরিবর্তন: মার্কিন ফেডERAL রিজার্ভের সুদের হার নীতির পরিবর্তন বা আর্থিক নীতি কঠোর হলে বাজারে ইতিবাচক ধারা বিপরীত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মন্তব্য ও ভবিষ্যৎদ্বাণী

  • জেমি ডাইমন (জে পি মরগান): “বিটকয়েনের স্থান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে; যারা আগেভাগে প্রবেশ করেছেন তারা উপকৃত হতে পারেন।”
  • রেকট ক্যাপিটাল: “সপ্তাহিক ক্যান্ডেল ক্লোজ $১০৩,০০০–এর উপরে ছিল, যা ইতিবাচক সাপোর্ট ইঙ্গিত করে।”
  • উন্নয়নশীল বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে যথাযথ নিয়ন্ত্রক স্বীকৃতি এবং বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বেড়েই যে, বিটকয়েন $১২০,০০০–এর সীমা অতিক্রম করতে পারে।

Signalbd.com-এর জন্য প্রাসঙ্গিক বার্তা

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট এখন মুদ্রার অনিশ্চয়তার মধ্যে অন্যতম উদাহরণ। বিটকয়েনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেমন–সীমিত যোগান (২১ মিলিয়ন কয়েন), বিকেন্দ্রীকরণ ও দ্রুত লেনদেন, এটিকে একটি ‘ডিজিটাল গোল্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে উঠতি দেশগুলো, সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ ম্যানেজাররা ঝুঁকি-বণ্টন ও পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য বিটকয়েনকে অন্তর্ভুক্ত করছেন।

আমাদের পরামর্শ:

  • দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী: ঝুঁকি সহ্য করার ক্ষমতা অনুযায়ী ধাপ-পদক্ষেপে ক্রয় করুন।
  • স্বল্পমেয়াদি ট্রেডার: মূল গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
  • নিবন্ধিত বিনিয়োগকারী: বিশ্বস্ত এক্সচেঞ্জ ও ওয়ালেট সেবা বেছে নিন এবং ‘কোল্ড স্টোরেজ’ ব্যবহারে জোর দিন।

২২ মে, ২০২৫ তারিখে বিটকয়েনের দাম নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। মুডিসের ঋণমান কমানো, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট উদ্বেগ, বাণিজ্য পরিস্থিতির পরিবর্তন ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ—এসবই একসঙ্গে মূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রধান চালিকা শক্তি। তবে, দ্রুত বৃদ্ধি পরবর্তী সময়ে মূল্যের ভোলাটিলিটি ও নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি মাথায় রেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতির দিকনির্দেশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ও ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রক কাঠামোই ঈষৎ–ঊর্ধ্বমুখী ধারা স্থায়ী করতে প্রধান ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button