ঈদের আগেই বাজারে আসছে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট

থাকছে না বঙ্গবন্ধুর ছবি, ফিরে আসছে আগের নকশা ও অভ্যুত্থান প্রতীক
পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই বাজারে আসছে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট। তবে এবারকার নতুন নোটে থাকছে না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। পরিবর্তে যুক্ত হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রতীক ও পুরোনো নকশার কিছু উপাদান।
কী থাকছে নতুন নোটে?
গাজীপুরের সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা টাঁকশাল নামে পরিচিত, ইতোমধ্যে নতুন নকশার ২০ টাকার নোট ছাপা প্রায় শেষ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহে টাঁকশাল কর্তৃপক্ষ ২০ টাকার নতুন নোট হস্তান্তর করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তার পরবর্তী সপ্তাহে ৫০ ও ১০০০ টাকার নোটও হস্তান্তর করা হবে।
নতুন নোটগুলোতে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পালাবদলের প্রতীক হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতীকী গ্রাফিতি এবং পুরোনো ডিজাইনের উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা বিশেষ চিত্র এতে রাখা হয়নি। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, “নতুন নোটগুলোতে নিরপেক্ষতা এবং জনগণের ঐক্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
বিতর্কিত বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত
২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত কিছু নতুন নোট নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে, একদলীয় শাসনের প্রতীক হিসেবে এসব নোটের ব্যবহার জনগণের একাংশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের ১০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনায় সব ব্যাংককে জানিয়ে দেয়, বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নতুন নোটের বিনিময় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে তাদের শাখায় মজুদ থাকা নতুন নোট বিতরণ না করে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে গত কয়েক মাসে বাজারে ছেঁড়া ও পুরোনো নোটের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ঈদ উপলক্ষে নতুন নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
ঈদের আগে সীমিত সংখ্যায় আসবে বাজারে
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে সীমিত সংখ্যায় হলেও নতুন নোট ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় ছাপার পরিমাণ কম হওয়ায় পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
নতুন নোটের বিতরণ শুরু হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও অন্যান্য শাখা থেকে। পরে দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরবরাহ করা হবে। ঈদের ছুটি শুরুর আগেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
টাঁকশালের সীমাবদ্ধতা
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন ডিজাইনের একটি নোট ছাপাতে সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। একসঙ্গে তিনটি নোটের বেশি ছাপানোর সক্ষমতা নেই টাঁকশালের। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ১০, ৫০০ এবং ২০০ টাকার নোটও নতুন নকশায় ছাপানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
টাঁকশালের এক কর্মকর্তা বলেন, “নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ডিসেম্বরেই সিদ্ধান্ত হয় নতুন নকশার নোট ছাপানোর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ থেকে ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। ঈদের আগেই বাজারে আনার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।”
নতুন নোটে ‘জাতীয় ঐক্য’ ও ‘গণতন্ত্র’-এর প্রতীকী বার্তা
নতুন নোটগুলো শুধু আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং এগুলোতে বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা প্রতিফলিত হবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়া এবং অভ্যুত্থানের প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সাম্প্রতিক ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে নোট ডিজাইনের মাধ্যমে তুলে ধরার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “নতুন ডিজাইনে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, ঐক্য ও গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আগের নকশার সঙ্গে আধুনিক উপাদান যুক্ত করে এটি আরও গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে।”
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা
ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে নতুন টাকার মোহ বরাবরই থাকে। ব্যাংকগুলোতেও প্রতি বছর নতুন নোট সংগ্রহের জন্য লম্বা লাইন পড়ে।
এ বছর নতুন নকশার নোট পাওয়া যাবে শুনে অনেকেই আশাবাদী। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে হতাশাও দেখা দিতে পারে।
এক ব্যাংক গ্রাহক বলেন, “নতুন নোট যদি সীমিতভাবে দেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ তো বঞ্চিতই থাকবে। আমরা চাই সবার কাছে কিছু হলেও নতুন নোট পৌঁছাক।”
সারাংশ:
- ঈদের আগেই বাজারে আসছে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট।
- বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে না; যুক্ত হচ্ছে অভ্যুত্থানের প্রতীক ও আগের নকশা।
- টাঁকশালে ছাপার কাজ চলছে; ২০ টাকার নোট প্রস্তুত প্রায়।
- সীমিত পরিসরে হলেও ঈদের আগেই বাজারে ছাড়া হবে।
- বিতর্কিত নোট স্থগিত হওয়ায় বাজারে ছেঁড়া নোট বেড়েছে।