বাংলাদেশ

যশোরে ঘরের ভেতর স্টিলের বাক্সে লুকানো গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী আটক

Advertisement

যশোরের বাঘারপাড়ায় ঘরের ভিতরে স্টিলের বাক্সের নিচ থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মৃতদেহটি ছিল ঘরের ভেতরে রাখা এক স্টিলের বাক্সের মধ্যে, যার ওপর কাপড় ও বালিশ রাখা ছিল। মৃত গৃহবধূ হলেন সুচিত্রা দেবনাথ (৫৮), যিনি ওই গ্রামের তপন দেবনাথের স্ত্রী। পুলিশ এই ঘটনায় সুচিত্রা দেবনাথের স্বামী তপন দেবনাথ (৬৪) কে আটক করেছে এবং তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ঘটনার বিবরণ:

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুচিত্রা দেবনাথ এবং তাঁর স্বামী তপন দেবনাথ দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছিলেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। সন্তানরা সকলেই বিবাহিত এবং ছেলে ও তার পরিবার বর্তমানে যশোর শহরে বসবাস করেন।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে সুচিত্রা দেবনাথকে বাড়িতে আর কেউ দেখতে পায়নি। একইদিন সকালে তপন দেবনাথ যশোর শহরের উদ্দেশে বের হন। দুপুরের পর বাড়ি ফিরে তিনি স্ত্রীকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজের বসতঘরের ভেতরে রাখা টিনের দোচালা ঘরের মধ্যে থাকা একটি স্টিলের বাক্স খুলে দেখতে পান, ভেতরে কাপড় ও বালিশের নিচে হাঁটু ভাঁজ করে স্ত্রীর মরদেহ পড়ে আছে।

পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা জানায়, স্ত্রীর ও স্বামীর মধ্যে পূর্ব থেকেই পারিবারিক অনৈক্য ও ঝগড়া চলছিল। এ নিয়ে আগেও অনেকবার কথাকাটাকাটি হয়েছে। তবে কেউ কল্পনাও করেননি যে, এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটবে।

পুলিশি পদক্ষেপ ও তদন্ত

মরদেহ পাওয়ার খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ দ্রুত মরদেহ উদ্ধার করে বাঘারপাড়া থানায় নিয়ে আসে। মৃতার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং ঠোঁটে কাটা দাগও রয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, আঘাত করে হত্যা করার পর মরদেহটি লুকিয়ে রাখার জন্য বাক্সের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়েছে।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান জানান, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, নিহতের স্বামীকে আটক করে তদন্ত চলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

পারিবারিক কলহ ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

বাঘারপাড়া উপজেলা ও ঘোষনগর গ্রামের স্থানীয়রা জানান, পারিবারিক কলহ ও মানসিক চাপ অনেক সময়ই গৃহহত্যার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে। বিশেষ করে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য, সম্পদ-বিতরণ, সন্তানদের বিয়ে ইত্যাদি নিয়ে দম্পতিদের মধ্যে মনোমালিন্য বাড়ে। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও তা দেখা গেছে।

গ্রামবাসীর কথায়, “তপন দেবনাথ ও সুচিত্রা দেবনাথের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া চলছিল। অনেক সময় ঝগড়া এমন পর্যায়ে পৌঁছাত যে প্রতিবেশীরাও মাঝেমধ্যে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতেন।”

গৃহহত্যার বিরুদ্ধে সমাজের দায়

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে গৃহহত্যার ঘটনা কম নয়। পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে সম্পত্তি ও আর্থিক সমস্যায় অনেক সময় এই ধরনের ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়। বিশেষ করে নারী নির্যাতন ও গৃহহত্যা রোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

বাঘারপাড়া থানার ওসি ফকির তাইজুর রহমান বলছেন, “আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে মিলে গৃহহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেব। পরিবারে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া দরকার।”

কি করা উচিত: পরামর্শ ও প্রতিকার

১. পারিবারিক সমস্যা আলোচনা করুন: পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহানুভূতির মাধ্যমে পারিবারিক দ্বন্দ্ব কমাতে হবে।

২. সামাজিক সহায়তা গ্রহণ: স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় নেতা বা সমাজকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

৩. নারী সুরক্ষা আইন সম্পর্কে অবগত থাকা: বাংলাদেশে গৃহহত্যা ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। যদি প্রয়োজন হয়, থানায় অভিযোগ দাখিল করতে হবে।

৪. সাইকলজিক্যাল সাপোর্ট নিন: মানসিক চাপ কমাতে পরিবার এবং ব্যক্তিগত স্তরে উপযুক্ত পরামর্শ ও চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

যশোরের বাঘারপাড়া থেকে পাওয়া এই মর্মান্তিক গৃহহত্যার ঘটনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নারী নিরাপত্তা ও পারিবারিক শান্তির গুরুত্ব তুলে ধরে। পুলিশ প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং স্থানীয় সমাজের সংহতি ছাড়া এই ধরনের ঘটনা রোধ সম্ভব নয়। নিহত সুচিত্রা দেবনাথের আত্মার শান্তি কামনা করছি, পাশাপাশি আশা করি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজে নারী নিরাপত্তা ও পারিবারিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সকলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।

Signalbd.com-এ এই ধরনের সঠিক ও বিশদ খবর নিয়মিত পেতে আমাদের সাথে থাকুন।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button