আঞ্চলিক

নোয়াখালী হাতিয়ায় ৫ দিন পর উদ্ধার ১৪ জেলে

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ইঞ্জিন বিকল, ৫ দিন আটকা পড়েছিলেন ১৪ জন জেলে
৯৯৯-এ ফোন করে জীবন রক্ষা পেলেন তারা, কোস্ট গার্ডের সক্রিয়তা প্রশংসনীয়

নোয়াখালীর হাতিয়া উপকূলে মৎস্যজীবীদের জন্য এক আশার আলো জ্বালাল কোস্ট গার্ড। ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট থেকে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে যাওয়া ‘এফবি জামিলা’ নামের ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এরপর থেকে ১৪ জন মাঝিমাল্লা পাঁচ দিন ধরে সমুদ্রে ভাসতে থাকেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ার কারণে তারা কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার তারা নেটওয়ার্ক পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন এবং সাহায্য চান।

এই কল পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় কোস্ট গার্ড। হাতিয়ার পূর্বে গাংগুরিয়ার চরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ট্রলারসহ জেলেদের। অসুস্থ এক ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং নিরাপদে ট্রলারটি টেনে নিয়ে আসা হয় সূর্যমুখী ঘাটে।

৫ দিন ধরে সমুদ্রে আটকা পড়ার ভয়াবহ কাহিনী

‘এফবি জামিলা’ ট্রলারটি মাছ শিকারের জন্য ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া উদ্দেশে রওনা দেয়। ২০ জুলাই ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ফলে তারা আটকা পড়েন। সমুদ্রের বিশাল জলরাশির মাঝখানে নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের পক্ষে কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পাঁচ দিন ধরে খাবার ও পানির সংকটে তারা ভাসতে থাকেন, আর্তনাদের মধ্যে ছিলেন অসুস্থ একজন মাঝিমাল্লা।

৯৯৯-এর কলেই বেঁচে গেল ১৪ জীবন

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করায় দ্রুত কোস্ট গার্ডের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। তারা রাতের আঁধারে হাতিয়ার উপকূল বরাবর গোছগাছ করে গাংগুরিয়ার চর থেকে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে সফল হন। কোস্ট গার্ডের তৎপরতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপে প্রাণে বাঁচেন ১৪ জন জেলে।

কোস্ট গার্ডের ভূমিকা ও গুরুত্ব

কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম উল হক বলেন,

“উপকূলীয় এলাকায় যেকোনো বিপদে থাকা জেলেদের রক্ষায় কোস্ট গার্ড সর্বদা প্রস্তুত। এই ধরনের উদ্ধার অভিযান নিয়মিত চালানো হয় এবং অপরাধ দমনেও আমাদের সদস্যরা সতর্ক।”

হাতিয়ার উপকূল: বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রার অঙ্গ

হাতিয়া উপজেলা বাংলাদেশের অন্যতম বড় মৎস্যজীবী কেন্দ্র। এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। মাঝেমধ্যেই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েন জেলেরা। তাই সমুদ্র নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাছ ধরায় জেলেদের ঝুঁকি ও নিরাপত্তার গুরুত্ব

সমুদ্রে মাছ ধরা মৎস্যজীবীদের জীবিকা হলেও এই কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও জরুরি সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। অনেক সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয় না। এই ঘটনার মতো পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকর উদ্ধার অভিযান প্রাণ রক্ষায় সহায়ক হয়।

৯৯৯ সেবা: দুর্যোগে জীবনদাতা

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ দেশের প্রতিটি প্রান্তে জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেয়। এটি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা ও কোস্ট গার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবার সঙ্গে যুক্ত। সঠিক সময়ে এই সেবা চালু থাকায় অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজন হলে নির্ভয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে হবে।

অতিরিক্ত তথ্য: কোস্ট গার্ড ও তাদের অবদান

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূলীয় নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা শুধু উদ্ধার অভিযান নয়, পণ্য ও মাদক পাচার দমন, অপরাধ দমন, পরিবেশ রক্ষা, এবং সমুদ্র সীমার নজরদারিও করে। এদের দক্ষতা ও তৎপরতা দেশকে উপকূলীয় নিরাপত্তায় দৃঢ় করছে।

হাতিয়ায় পাঁচ দিন ধরে সমুদ্রে ভাসমান ১৪ জন জেলের জীবন বাঁচানোর এই ঘটনা প্রমাণ করে, জরুরি সেবা ও কোস্ট গার্ডের সমন্বিত কার্যক্রম কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে উন্নত নেটওয়ার্ক সুবিধা ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button