একনেকে ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

২০২৪-২৫ অর্থবছরের দশম একনেক সভায় মোট ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। আজ ৭ মে, বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সচিব ও উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যয় কাঠামো বিশ্লেষণ:
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৩,৭৫৬.২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে:
- সরকারি অর্থায়ন: ২,৭৯৮.১৯ কোটি টাকা
- বিদেশি প্রকল্প ঋণ: ৮১২.৯৫ কোটি টাকা
- সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন: ১৪৫.০৬ কোটি টাকা
এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিশু ও নারীর সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ।
অনুমোদিত ৯টি প্রধান প্রকল্প:
১. বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প (৩য় সংশোধিত)
– ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বিদ্যমান কাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পটি।
২. নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ প্রকল্প
– “প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড হার্মফুল প্র্যাকটিসেস অ্যাগেইনস্ট চিলড্রেন অ্যান্ড ওমেন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এই প্রকল্পটি পরিচালনা করবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৩. নারায়ণগঞ্জ খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)
– নৌপরিবহন ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
৪. গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)
– রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই জলাশয় উন্নয়নের মাধ্যমে নগর ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্য।
৫. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (২য় সংশোধিত)
– “ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (কম্পোনেন্ট ২ ও ৩)” নামের এই প্রকল্পটি দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি ও পুনরুদ্ধার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
৬. ‘বি-স্ট্রং’ প্রজেক্টের ডিডিএম পার্ট
– জরুরি প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত প্রকল্প যার পুরো নাম “ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং)”
৭. খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে সেচ উন্নয়ন প্রকল্প
– কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া এই প্রকল্পে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৮. ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)
– সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘উইকেয়ার ফেজ-১’ প্রকল্পের আওতায় এন-৭ মহাসড়ক উন্নয়নে এই বরাদ্দ।
৯. বৃহত্তর কুমিল্লায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (৩য় পর্যায়, ১ম সংশোধিত)
– এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প গ্রামীণ সড়ক ও সেতু উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে যেসব প্রকল্পের:
একই সভায় আরও ৩টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে। সেগুলো হলো:
- ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ
- খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (২য় সংশোধিত)
- জাতীয় চিত্রশালা ও জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)
সভায় উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা:
পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন—
- আইন, বিচার ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল
- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
- স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অব. লে. জে. জাহাঙ্গীর আলম
- শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান
- খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার
- বিদ্যুৎ ও পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
- পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
- মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
- সমাজকল্যাণ ও মহিলা-শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ
- সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
- স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের অবকাঠামো, জনসেবা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত নজরদারি নিশ্চিত করা হবে যেন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হয়।