অর্থনীতি

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ছয় খাতে টেকসই উন্নয়নের বিপ্লব

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। শুধুমাত্র একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে, তারা কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, উদ্যোক্তা গঠন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একাধিক সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার বাস্তব সুফল পাচ্ছে দেশের হাজার হাজার মানুষ।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের এইসব কর্মসূচি দেশের হাওরাঞ্চল, চরাঞ্চল, দুর্গম গ্রাম ও নগরের প্রান্তিক মানুষদের জীবনে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ব্যাংকটির মতে, এসব উদ্যোগ কেবল দাতব্য নয়—এটি তাদের করপোরেট দায়বদ্ধতার অংশ, যা ‘হেয়ার ফর গুড’—অর্থাৎ ‘ভালো করার জন্য আছি’—এই অঙ্গীকারে দৃঢ়।

ছয় খাতে ব্যাংকের প্রধান উদ্যোগ ও প্রভাব

১. কৃষি উন্নয়ন: ২৩ জেলায় ১১টি প্রকল্প

বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি খাতকে শক্তিশালী করতে ২৩টি জেলায় ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ফসল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
  • মাছ ও মৌচাষ
  • কৃষি যান্ত্রিকীকরণ
  • কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৭টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে তারা কৃষিতে উদ্ভাবন ও টেকসই প্রযুক্তি সম্প্রসারণে অবদান রাখছে। এর ফলে হাওর এলাকার কৃষকদের বার্ষিক আয় ১৫.৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এবং কৃষিকাজে সময় ও খরচ কমেছে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত।

২. স্বাস্থ্যসেবা: ভাসমান হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন কেন্দ্র

দূরবর্তী ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাংকটি নিয়েছে নজিরবিহীন উদ্যোগ:

  • সারা দেশে ১১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে চক্ষু চিকিৎসা
  • ভাসমান হাসপাতালের মাধ্যমে ৫০ হাজার গ্রামবাসীর চিকিৎসা
  • ১১৮ নার্সকে উন্নত প্রশিক্ষণ
  • ৪টি কমিউনিটি হাসপাতালে মেডিকেল অক্সিজেন কেন্দ্র

এই স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পগুলো বিশেষ করে বরিশাল, পটুয়াখালী, বান্দরবান ও সুন্দরবনের কাছাকাছি অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে।

৩. শিক্ষা ও তরুণদের ক্ষমতায়ন

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বিশ্বাস করে, দক্ষ ও শিক্ষিত তরুণরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চালিকাশক্তি। এজন্য তারা নিচ্ছে বহুস্তরীয় উদ্যোগ:

  • ইউসেপ বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘ফিউচারমেকার্স’ কর্মসূচিতে ৭,০০০ তরুণ-তরুণীর দক্ষতা উন্নয়ন
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে সম্মেলন কেন্দ্র ও শিক্ষক লাউঞ্জ স্থাপন
  • জাগো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫,০০০ শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ
  • ১ লাখ ১৬ হাজার তরুণ-তরুণীকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ

এসব কার্যক্রম তরুণদের কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সহায়তা করছে।

৪. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা

ব্যাংকটি পরিবেশ রক্ষায় নিচ্ছে বহুমাত্রিক কার্যক্রম:

  • খুলনা মুক্তি সেবা সংস্থা ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও ফুলচাষ উন্নয়ন
  • ৫০ হেক্টর জমিতে ৫ বছর মেয়াদি ম্যানগ্রোভ বন তৈরি প্রকল্প, যা জলবায়ু সহনশীলতা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করবে

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে সাতক্ষীরা ও ভোলা অঞ্চলে এইসব প্রকল্প কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

৫. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনী পদক্ষেপ

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিচ্ছে কার্যকর পদক্ষেপ:

  • উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তা
  • শীতকালে উত্তরের জেলায় ১০ হাজার মানুষকে শীতবস্ত্র
  • চরাঞ্চলে বন্যাকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮টি প্লিন্থ নির্মাণ

এইসব উদ্যোগ জলবায়ু-প্রভাবিত জনগণের জীবনযাত্রায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে।

৬. উদ্যোক্তা তৈরিতে ডিজিটাল প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশের ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়াতে অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এই উপলব্ধি থেকেই:

  • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ১ লাখ ১৬ হাজার তরুণকে ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ’ দিয়েছে
  • নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কোর্স ও অনলাইন সাপোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে

গবেষণায় প্রমাণিত উন্নয়ন ফলাফল

বিভিন্ন প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত গবেষণায় উঠে এসেছে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য ফলাফল:

হাওরের কৃষকরা লাভবান

  • আয় বৃদ্ধি: ৮৫ হাজার → ৯৮ হাজার টাকা
  • উৎপাদন বৃদ্ধি: ৩২.১১%
  • ধান কাটায় সময় সাশ্রয়: ৭৯.৫৪%
  • খরচ হ্রাস: ৫৫%–৭৫%

চরে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত

  • ৯২% পরিবারের খাদ্যাভ্যাস উন্নত
  • পরিবারের গড় আয়: ৭৫১৯ → ১৭২৬২ টাকা
  • মানসিক চাপ হ্রাস: ৪৯%

মধু উৎপাদনে বৃদ্ধি

  • উৎপাদন বেড়েছে: ২৫.৮৯%
  • বিক্রি বেড়েছে: ১৩.১০%
  • মূল্য বেড়েছে: ৭.৮৫%

এইসব তথ্য প্রকল্পগুলোর প্রভাব ও কার্যকারিতার বাস্তব প্রমাণ দেয়।

সহযোগীদের অবদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রধান বিটপী দাস চৌধুরী বলেন—

“মাঠ পর্যায়ে আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর সহায়তা ছাড়া এই প্রকল্পগুলো সম্ভব হতো না। তারা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তিনি আরও জানান, প্রতিটি প্রকল্প তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাতে টেকসই উন্নয়নের বাস্তবতা নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড: ১২০ বছরের যাত্রা

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ১৯০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে এটি দেশের একমাত্র বহুজাতিক ব্যাংক, যার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম রয়েছে।

তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে—

  • আরও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি প্রকল্প
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো প্রকল্প
  • তরুণ উদ্যোক্তা গঠনে গ্লোবাল লার্নিং হাব তৈরি
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button