অর্থনীতি

অবৈধ অভিবাসন বন্ধে ইতালির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই

বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে অবৈধ অভিবাসন রোধ এবং বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তি উভয় দেশের জন্যই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকাস্থ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতা স্মারকের মূল উদ্দেশ্য

এই সমঝোতা স্মারকের প্রধান লক্ষ্য হলো—

  • অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আনা
  • নিরাপদ ও বৈধ উপায়ে ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা
  • বাংলাদেশিদের জন্য ইতালিতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করা
  • প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও সুযোগ বৃদ্ধি
  • উচ্চশিক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের সুযোগ সম্প্রসারণ

প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো— যারা ইতালি যেতে ইচ্ছুক, তারা যেন নিরাপদে যেতে পারেন, বৈধভাবে ভালো পারিশ্রমিক পান, এবং দীর্ঘমেয়াদে ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান।”

ইতালি-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায

ড. নজরুল জানান, এটি বাংলাদেশ-ইতালির মধ্যে এই বিষয়ে প্রথমবারের মতো স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক। গত কয়েক মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মোট ছয়টি এমওইউ (MoU) স্বাক্ষর করেছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে, যার অন্যতম হলো এই ইতালির সঙ্গে চুক্তি।

“ইউরোপের বাজারে বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করাই আমাদের মূল কৌশল। যেসব দেশ বাংলাদেশের কর্মী নিতে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে দ্রুততম সময়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়া আমাদের নীতিগত অগ্রাধিকার,”—বলেন তিনি।

ইতালির দৃষ্টিভঙ্গি ও আগ্রহ

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বলেন, “বাংলাদেশিদের মধ্যে কর্মক্ষমতা ও নিষ্ঠা রয়েছে। আমাদের দেশে কৃষি, নির্মাণ, পরিষেবা, ও হসপিটালিটি খাতে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে, যা বাংলাদেশি শ্রমিকরা পূরণ করতে পারেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা চাই, অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি না নিয়ে মানুষ যেন সরকারি চ্যানেলে আসতে পারেন। এই চুক্তি সেই পথ উন্মুক্ত করছে।”

চুক্তির আওতায় কী কী সুবিধা মিলবে?

সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি নাগরিকরা যে সুবিধাগুলো পাবেন তা হলো:

  1. সহজতর ভিসা প্রক্রিয়া: কাজের ভিত্তিতে শ্রমিক ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আগের তুলনায় হবে দ্রুত ও স্বচ্ছ।
  2. চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি: ইতালির শ্রম বাজারে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়বে; কৃষি, নির্মাণ, হসপিটালিটি ইত্যাদি খাতে নিয়োগের সুযোগ মিলবে।
  3. শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য বৃত্তি সুযোগ বাড়বে।
  4. আইনি সহায়তা ও প্রবাসী সুরক্ষা: যারা বৈধভাবে ইতালিতে অবস্থান করবেন, তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আইনি সহায়তা মিলবে।
  5. অবৈধ অভিবাসন থেকে বৈধ অভিবাসনে রূপান্তরের সুযোগ: বিশেষ বিবেচনায় কিছু নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ প্রদান করা হবে।

নারী অভিবাসীদের জন্য সুখবর

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “অবৈধ নারী অভিবাসীদের জন্য ইতোমধ্যে জর্ডান ও সৌদি আরব জরিমানা ছাড়া বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ইউরোপেও সম্প্রসারিত করার চেষ্টা চলছে।”

সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের রোডম্যাপ

চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যথাসময়ে শুরু হবে। এ নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে যারা অভিবাসন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় নথিপত্র, নিরাপত্তা যাচাই, প্রশিক্ষণ ও ভাষা শিক্ষার দিকগুলো নির্ধারণ করবে। এছাড়া, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতি বছর নির্ধারিত সংখ্যক শ্রমিক পাঠানোর জন্য একটি ডাটাবেইসও তৈরি করা হবে।

প্রবাসী অভিবাসন নীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

এটি কেবল একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক নয়; বরং এটি বাংলাদেশের অভিবাসন নীতিতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা।

যেখানে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে, বৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ শুধু দেশের অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করবে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নতুন মাত্রা যোগ করবে।

উপসংহার

বাংলাদেশ-ইতালি চুক্তিটি প্রবাসী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ধরনের সমঝোতা স্মারক অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করবে।

ভবিষ্যতে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও এমন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button