অর্থনীতি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব

বাংলাদেশের সাধারণ করদাতাদের জন্য সুখবর আসতে পারে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকলেও, এই সীমা বাড়িয়ে ৩.৭৫ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করার সুপারিশ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

মূল্যস্ফীতির প্রভাব ও করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর যৌক্তিকতা

গত এক বছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৪৪ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন সংগঠনের প্রস্তাবনা

এফবিসিসিআই-এর প্রস্তাব

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে চার লাখ টাকা এবং নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে করদাতাদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে। এছাড়া, সর্বনিম্ন করহার ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি।

ডিসিসিআই-এর প্রস্তাব

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া, দ্বিতীয় করস্ল্যাবের সীমা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে।

সিপিডি-এর প্রস্তাব

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি মূল্যস্ফীতির প্রভাব বিবেচনা করে এই প্রস্তাব দিয়েছে।

বর্তমান করমুক্ত আয়সীমা ও করহার

বর্তমানে বাংলাদেশে সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে করদাতাদের জন্য এই সীমা চার লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে চার লাখ টাকা এবং গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা।

বর্তমান করহার নিম্নরূপ:

  • ৫%: পরবর্তী এক লাখ টাকা
  • ১০%: পরবর্তী তিন লাখ টাকা
  • ১৫%: পরবর্তী চার লাখ টাকা
  • ২০%: পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা
  • ২৫%: পরবর্তী ছয় লাখ টাকা
  • ৩০%: অবশিষ্ট আয়

সরকারের অবস্থান ও সম্ভাব্য পরিবর্তন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। তবে, করহার পরিবর্তন সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আসন্ন বাজেটে এই বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা আসতে পারে।

সাধারণ করদাতাদের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে সাধারণ করদাতাদের করের বোঝা কমবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের জন্য এটি স্বস্তির বার্তা হবে। এছাড়া, করহার হ্রাস পেলে করদাতারা আরও উৎসাহিত হবেন এবং রাজস্ব আদায় বাড়বে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব সাধারণ করদাতাদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে এই পরিবর্তন সময়োপযোগী। সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button