নভোএয়ারের সব উড়ান স্থগিত: যাত্রীদের জন্য কী করণীয়

বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সব উড়ান সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। শুক্রবার (২ মে) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থার রিজার্ভেশন বিভাগ। তবে উড়ান বন্ধ থাকার সময়সীমা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি।
এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক যাত্রী, যারা আগেই টিকিট কেটেছেন বা নিকট ভবিষ্যতের ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন।
হঠাৎ কেন বন্ধ হলো নভোএয়ারের উড়ান?
সূত্র জানায়, নভোএয়ার বর্তমানে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির আলোচনায় রয়েছে। সেই বিক্রয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক ও কারিগরি নিরীক্ষা (audit) চালানো হচ্ছে। নিরীক্ষা চলাকালীন সময়ে উড়ান চালানো বন্ধ রাখা হয়েছে।
নভোএয়ারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত সাময়িক এবং চূড়ান্ত বিক্রয়ের আগে কোম্পানির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে বিক্রয়ের আলোচনা ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
যাত্রীদের জন্য কী করণীয়? টিকিট ফেরত পাবেন কীভাবে?
নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের আশ্বস্ত করেছে যে, যেসব যাত্রী সরাসরি নভোএয়ার অফিস বা ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কিনেছেন, তারা তাদের টিকিটের মূল্য ফেরত পাবেন। এজন্য:
- নভোএয়ারের নিজস্ব কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
- রিজার্ভেশন হেল্পলাইনের মাধ্যমে টিকিট বাতিল বা রিফান্ড সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে।
আর যেসব যাত্রী ট্রাভেল এজেন্সি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে টিকিট কেটেছেন, তাদেরকে সেই এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
রিফান্ড প্রসেস শুরু হয়েছে কিনা বা কত দিনে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে—এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি।
লোকসান ও বিক্রির চাপে নভোএয়ার
নভোএয়ারের উড্ডয়ন স্থগিতের পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি আর্থিক ও কাঠামোগত সংকট। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে:
- গত কয়েক বছর ধরে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ফুয়েল খরচ সামলাতে না পেরে কোম্পানিটি ক্রমাগত লোকসানে পড়ে।
- একাধিকবার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বিক্রির আলোচনা হলেও সফলতা মেলেনি।
বর্তমানে এক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা চলছে এবং বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে নতুন মালিকানায় কোম্পানি চালু রাখা হতে পারে।
ভবিষ্যতের যাত্রীরা কী করবেন?
যেসব যাত্রীরা ভবিষ্যতের জন্য টিকিট কেটেছেন, বা যারা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন, তাদের জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো:
- পরিকল্পিত ভ্রমণের আগে নভোএয়ারের অফিস বা ওয়েবসাইটে আপডেট চেক করুন
- অন্য বিকল্প বিমান সংস্থার (যেমন ইউএস-বাংলা, বিমান বাংলাদেশ) টিকিট খোঁজ করুন
- রিফান্ড বা পরিবর্তন পলিসি সম্পর্কে নিশ্চিত হন, বিশেষ করে এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কিনলে
- যাত্রার পূর্বে গন্তব্য ও তারিখ অনুযায়ী ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন
বিমান খাতে নজরদারির প্রয়োজনীয়তা
নভোএয়ারের এই সংকট আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের বেসরকারি বিমান খাতকে বিস্তৃত নজরদারি, সহায়তা ও নীতিগত সহায়তা দরকার। না হলে অনেক সম্ভাবনাময় সংস্থাই লোকসান ও প্রতিযোগিতার চাপে বাজার থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
নভোএয়ার দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সৈয়দপুর, যশোর, বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে নির্ভরযোগ্য ফ্লাইট পরিচালনা করত। এর আকস্মিক স্থগিত সিদ্ধান্ত দেশীয় অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যাত্রীদের সতর্কতা ও কোম্পানির দায়বদ্ধতা জরুরি
বর্তমানে নভোএয়ারের ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে দুই সম্ভাবনার মাঝে—একটি হলো বিক্রি এবং চালু থাকা, অন্যটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া। যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB)-এর পক্ষ থেকেও তদারকি প্রয়োজন।
Signalbd.com আপনাদের জানিয়ে দেবে নভোএয়ারের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম, বিক্রয়ের অগ্রগতি বা পুনরায় উড়ান চালুর কোনো ঘোষণা হলে।