অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট, কর রেয়াত নয় অর্থ উপদেষ্টা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য ও লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক বাজেট উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “আমরা এবার এমন বাজেট দেব, যা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। প্রত্যাশার ফুলঝুরি নয়, বরং বাস্তবতা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করছি।”
গতকাল বুধবার (১ মে) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ৪৫তম পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বড় বাজেট নয়, বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বলেন, “বহু বছর ধরে আমরা বড় বাজেট দিয়েছি, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এবার আমরা বাজেটের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “কর রেয়াতের সময় শেষ। আইএমএফের চাপে আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রেয়াত দিলে সরকার সেই খাত থেকে আয় হারায়। কাজেই রেয়াত নয়, ন্যায্য কর আদায়ের পথে হাঁটতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে কৌশলী অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করব। তবে তাদের চটাব না। আলোচনার জন্য আমাদের হাতে এখনও ৯০ দিন সময় আছে। প্রয়োজনে আরও সময় চাইব।”
ব্যয় নয়, লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আগে বাজেট মানেই ছিল খরচের উৎসব। প্রতিটি মন্ত্রণালয় অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে মেতে উঠত। এবার আমরা ব্যয় নয়, বরং লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট প্রণয়নে মনোযোগী।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবছর এনবিআরকে অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হয়। এনবিআর বাধ্য হয় গণহারে কর আরোপ করতে। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ পড়ে। তাই প্রস্তাব দেওয়ার সময় দায়িত্বশীল হতে হবে। কর কাঠামোয় ন্যায্যতা না আনলে সমাজ দুর্বৃত্তায়িত হয়।”
বিনিয়োগ নয়, চাকরি তৈরিই মূল লক্ষ্য: বিডা চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “চাকরির বাজার তৈরি এখন বিনিয়োগের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতই একমাত্র ক্ষেত্র যেখানে বড় পরিসরে চাকরি সৃষ্টি সম্ভব।”
তিনি জানান, এফবিসিসিআই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু যদি সুপারিশের সংখ্যা কমিয়ে ১৫টির মতো করা যেত, তাহলে চলতি বছরের মধ্যেই সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হতো।
শুল্ককাঠামোতে সংস্কার জরুরি: ট্রেড কমিশন
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, “বর্তমান কাস্টমস ও শুল্ককাঠামো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সর্বোচ্চ শুল্কহার ২৫ শতাংশ, কিন্তু এর সঙ্গে সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক মিলে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ তৈরি হয়। এই কাঠামোকে যৌক্তিক করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শুল্কহার যৌক্তিক না হলে দেশে আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।”