অর্থনীতি

স্বস্তি ফিরেছে পেঁয়াজে, চালের দামেও সুখবর

গত সপ্তাহে হঠাৎ করে বাড়তি দামে বিপাকে পড়া পেঁয়াজের বাজারে এখন ফিরেছে স্বস্তি। পাশাপাশি চালের বাজারেও মিলেছে ভালো খবর। তবে সবজির কিছু কিছু ধরনে দাম বাড়তির দিকে। এদিকে চরম দামে পড়েছে আলুর বাজার—গত চার বছরে এই প্রথমবার ঢাকায় পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম নেমেছে ১০ টাকায়। আর লেবুর দাম এতটা পড়ে গেছে যে বিক্রেতারা ক্রেতাই খুঁজে পাচ্ছেন না।

পেঁয়াজে ধস, কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ

গত সপ্তাহে রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৬৫-৭০ টাকায় পৌঁছেছিল। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টানা অভিযান এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় এখন দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে এসেছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচা, রামপুরা, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ভ্রাম্যমাণ দোকানে কিছু জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়ও।

বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছিল। এ বিষয়ে সেগুনবাগিচা বাজারের বিক্রেতা মো. সিফাত বলেন, “এ মৌসুমের উৎপাদন দিয়েই আগামী ৭-৮ মাস চলা সম্ভব। দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়।”

এদিকে ভারত থেকে আমদানির অনুমতির জন্য আবেদন করেছে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপ। তাঁদের দাবি, আমদানি চালু হলে দেশে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকায় নেমে আসবে।

চালের বাজারে ইতিবাচক সাড়া

নতুন বোরো ধান বাজারে আসার ফলে বেশ কয়েকটি প্রিমিয়াম ও মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে—

  • নাজিরশাইল, কাটারি, মিনিকেট, জিরাশাইল: ৭২-৮৫ টাকা কেজি
  • বিআর২৮, বিআর২৯, পাইজাম: ৬০-৬৫ টাকা কেজি
  • মোটা চাল: ৫৪-৫৬ টাকা কেজি

মানিকনগরের ব্যবসায়ী মো. ইউনুস জানান, “বোরোর মধ্যে আটাশ, ঊনত্রিশ জাতের চাল বাজারে এসেছে। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তায় ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।”

আলুর দামে রেকর্ড পতন, কৃষক বিপদে

গত চার বছরে এই প্রথম ঢাকায় পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম কেজি প্রতি ১০-১৩ টাকায় নেমেছে। খুচরায় সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা, আর লাল আলু ১৬-২০ টাকা কেজিতে।

কৃষকরা বলছেন, এই দাম উৎপাদন খরচও উঠছে না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত মৌসুমে আলুর উৎপাদন ব্যয় ছিল প্রায় ১১ টাকা কেজিতে, এবার তা আরও বেশি। বিক্রেতারা সতর্ক করছেন, লোকসানে পড়া কৃষকরা ভবিষ্যতে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হতে পারেন, যার ফলে দেশে ভবিষ্যতে আলুর সংকট দেখা দিতে পারে।

সবজির দামে চাপ, সরবরাহ কমে গেছে

অন্যদিকে সবজির বাজারে কিছুটা চাপ লক্ষ্য করা গেছে। মালিবাগ, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে—

  • টমেটো: ৩০-৪০ টাকা কেজি
  • ঢ্যাঁড়স: ৫০ টাকা
  • করলা, পটোল, পেঁপে, শসা: ৬০ টাকা
  • বেগুন: ৭০-১০০ টাকা
  • কইডা: ৭০ টাকা
  • বরবটি: ৮০ টাকা
  • কাঁকরোল: ১২০ টাকা

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে বলে এসব সবজির দাম বাড়ছে।

লেবুতে অতিরিক্ত ধস, তবুও বিক্রি নেই

মাসের শুরুতে যে লেবুর হালি ছিল ৭০-৮০ টাকা, এখন তা নেমে এসেছে ২০-৩০ টাকায়। ছোট লেবুর ডজন পাওয়া যাচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। কিন্তু তারপরও ক্রেতার খোঁজ নেই।

রামপুরা বাজারের এক লেবু বিক্রেতা বলেন, “গত মাসেও লেবুর জন্য হাহাকার ছিল, আর এখন এমন অবস্থা যে ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছি না।”

বর্তমানে পেঁয়াজ ও চালের বাজারে স্বস্তি দেখা গেলেও সবজির কিছু ধরনের দাম সাধারণ ক্রেতাদের চিন্তায় ফেলছে। আর সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থা আলুর—যেখানে উৎপাদন খরচ তুলতেও হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দরকার সমন্বিত নজরদারি এবং সময়মতো আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button