পেঁয়াজ ও সবজির দাম বেড়েছে: বাজার পরিস্থিতি ও কৃষকের অসুবিধালেখক

বর্তমানে বাজারে সবজির দাম চড়া হয়ে উঠেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন থেকে চার মাসের মধ্যে যে স্বস্তি বাজারে দেখা গিয়েছিল, তা এখন আর নেই। পেঁয়াজ, সবজি এবং মুরগির ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চালের দামও বাড়তি রয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে।
সবজির দাম নিয়ে অস্বস্তি
এ বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে শীতকালীন সবজির দাম একটু কম ছিল, কিন্তু এখন প্রায় সব ধরনের সবজির দামই ৮০ টাকার উপরে চলে গেছে। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে, যেমন আগারগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং টাউন হল বাজারে বাজারমূল্য ওঠানামা করছে। এই প্রতিবেদক, বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে রয়েছে। যেমন প্রতি কেজি বরবটি, কচুর লতি, পটোল, চিচিঙ্গা, বেগুন এবং শালগমের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। কাঁকরোল এবং শজনের দাম আরও বেশি—কাঁকরোল ১২০ টাকা এবং শজনে ১৪০-১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, করলা, লাউ, ঝিঙে, ধুন্দুল, ঢ্যাঁড়স, এবং পেঁপের দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে কম দামী সবজি বর্তমানে টমেটো, যার কেজি ৪০-৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের এ সময়ে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসেও একইভাবে সবজির দাম ছিল চড়া, তবে বর্তমানে দাম কিছুটা বেড়েছে, যা কৃষকদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
কৃষকদের জন্য চিন্তার কারণ
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার এই বিষয়ে বলেন, “শীত মৌসুমে প্রচুর সবজি সরবরাহ ছিল, যার কারণে দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এতে কৃষকেরা লোকসান করেছে। এখন যে সবজি আসছে, তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। এ কারণে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।”
এখানে কিছুটা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচের কারণে দাম আরো বাড়ছে। কৃষকরা তাদের খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ করেন। তবে এটা ক্রেতাদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পেঁয়াজ এবং ডিমের দাম বেড়েছে
পেঁয়াজের দামও গত এক সপ্তাহের মধ্যে বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়েছে, এবং এক মাসের মধ্যে দাম ২০-২৫ টাকার মধ্যে বেড়ে গেছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, তবে পাড়া-মহল্লায় এই দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। অন্যদিকে, আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা। তবে, আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ সীমিত হওয়ায় এটি বাজারে পাওয়া যায় না খুব সহজে।
এছাড়া, মুরগির ডিমের দামও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে বাদামি ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আগে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়, যা এখন বেড়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। বর্তমানে, এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
চালের দামেও বৃদ্ধি
এ বছর বোরো মৌসুম চলছে, তবে চালের দাম তেমন কমেনি। বর্তমানে মিনিকেট চালের প্রতি কেজি ৮৮ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে, মোজাম্মেল মিনিকেটের কেজি ১০০ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। নাজিরশাইল চাল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৬০ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছে। তবে, তেল বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম হওয়ায় তা আরও দামে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ
রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আলম জানান, “রমজান মাসে কিছুটা আরামে ছিলাম, কারণ দাম তেমন বেড়েছিল না। কিন্তু এখন চাল, সয়াবিন তেল, ডিম, এবং সবজির দাম বেড়ে গেছে। আমাদের কষ্ট অনেক বাড়ছে, যা সত্যিই চিন্তার বিষয়।”
এছাড়া, বাসিন্দারা আরও জানান, এই সকল দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাদের মতে, সরকারকে উচিত বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা এবং কৃষকদের জন্য কিছু সহায়তা প্রদান করা।
সরকারী উদ্যোগ
এদিকে, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন কৃষকদের সহায়তা প্রদান, পরিবহন খরচ কমানো এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া। বিশেষত রমজান মাসের পর থেকে বাজারে দাম বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া উচিত, যাতে সাধারণ মানুষ বাজারে সবজি ও অন্যান্য পণ্য সস্তায় কিনতে পারে।
বর্তমানে বাজারে সবজির দাম চড়া, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেঁয়াজ, মুরগির ডিম এবং চালের দামও বেড়েছে, এবং এ পরিস্থিতি কৃষক ও ক্রেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে সরকারের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি চাপের মধ্যে না পড়তে হয়।