
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাবেক অধিনায়ক
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ওপেনার এবং সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল হঠাৎ করেই সরে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে। বুধবার (১ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর ১২টার মধ্যে ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়। সেই সময়ের মধ্যেই বিসিবি ভবনে গিয়ে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
এই খবর প্রকাশের পর থেকে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যানদের একজন হঠাৎ করেই নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে গেলেন—তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল।
বিসিবি নির্বাচনের প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি বড় আয়োজন। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। সাধারণত এই নির্বাচন তিনটি ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে—
- জেলা ও বিভাগীয় ক্যাটাগরি – এখান থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগ থেকে ২ জন করে এবং বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর থেকে একজন করে পরিচালক হন।
- ক্লাব ক্যাটাগরি – এখানে ১২ জন পরিচালক নির্বাচিত হন বিভিন্ন ক্লাবের ৭৬ জন কাউন্সিলরের ভোটে।
- বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থা ক্যাটাগরি – এই ক্যাটাগরি থেকে একজন পরিচালক নির্বাচিত হন ৪৫ জন কাউন্সিলরের ভোটে।
সব মিলিয়ে নির্বাচিত হন ২৩ জন পরিচালক। এরপর এই পরিচালকদের সঙ্গে আরও দু’জন মনোনীত পরিচালক যুক্ত হয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয় মোট ২৫ জনকে নিয়ে। সর্বশেষে এই ২৫ পরিচালক ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করেন বিসিবির সভাপতি।
২০২৫ সালের বিসিবি নির্বাচন আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
তামিম ইকবালের প্রত্যাহার – সময়ের মধ্যে জমা ফরম
প্রথম দিনের সকালেই তামিম ইকবাল বিসিবি ভবনে হাজির হন। মূল উদ্দেশ্য ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহার জমা দেওয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক প্রার্থী ইসরাফিল খসরু। দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা থাকলেও তামিম সময়ের আগেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
তবে তার এই পদক্ষেপে সৃষ্টি হয়েছে একধরনের ধোঁয়াশা। কারণ, ক্রিকেট বোর্ডের এই নির্বাচনে তার অংশগ্রহণের খবরে অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি হয়তো সক্রিয়ভাবে প্রশাসনিক ভূমিকায় আসবেন।
কেন সরে দাঁড়ালেন তামিম?
তামিম ইকবাল কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে তার সরে দাঁড়ানোর কারণ বিস্তারিত জানাননি। তবে ক্রিকেট মহলে নানা গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে।
- পারিবারিক কারণ : তিনি নাকি এখনও সক্রিয় রাজনীতিমূলক ক্রিকেট প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নন।
- অভ্যন্তরীণ সমীকরণ : বিসিবির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তামিম হয়তো আপাতত নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছেন।
- ক্যারিয়ার পরবর্তী পরিকল্পনা : ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর তিনি মিডিয়া, ব্যবসা এবং ক্রিকেট অ্যাকাডেমি নিয়ে ব্যস্ত। হয়তো এসবের সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব একসঙ্গে নিতে চাননি।
আরও প্রার্থীর সরে যাওয়ার সম্ভাবনা
তামিম ইকবালের মতো আরও অন্তত ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে যেতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। দুপুর ২টায় নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করবে। সেখানেই স্পষ্ট হবে কারা টিকে থাকলেন আর কারা লড়াই থেকে বিদায় নিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে তামিম ইকবালের অবদান
তামিম ইকবালের নাম বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি দেশের হয়ে খেলেছেন প্রায় দেড় দশক।
- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫,০০০ এর বেশি রান সংগ্রহ করেছেন।
- বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক।
- ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তার ইনিংস এখনও স্মরণীয়।
- ২০২০ সালে তিনি জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পান এবং দলকে নেতৃত্ব দেন উল্লেখযোগ্য সাফল্যে।
তার মত একজন তারকা খেলোয়াড় বিসিবির প্রশাসনে আসলে হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন ক্রিকেট উন্নয়নে নতুন দিক খুলবে। তাই তার সরে দাঁড়ানো অনেকের কাছে হতাশার।
বিসিবি নির্বাচনের গুরুত্ব
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা অনেকটাই নির্ভর করে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ওপর। দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো, ঘরোয়া ক্রিকেট, নারী ক্রিকেট, যুব উন্নয়নসহ নানা সিদ্ধান্ত আসে বোর্ড থেকেই।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করতে শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাই বিসিবির নির্বাচনকে ঘিরে সর্বদা থাকে আলোচনার ঝড়।
অতীতের বিসিবি নির্বাচন
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অতীত নির্বাচনের ইতিহাসে দেখা যায় বেশ কিছু আলোচিত অধ্যায়। বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সাবেক ক্রিকেটাররা প্রার্থী হয়েছেন। অনেকে নির্বাচিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
পূর্ববর্তী নির্বাচনে বোর্ড সভাপতির পদে নাজমুল হাসান পাপন নির্বাচিত হয়েছিলেন টানা তিনবার। এবারও তার প্রার্থীতা নিয়ে গুঞ্জন আছে। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি।
ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া
তামিম ইকবালের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন, তিনি হয়তো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, বিসিবি প্রশাসনে তার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের থাকা দরকার ছিল।
সামনে কী হতে পারে?
চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর বোঝা যাবে কোন কোন প্রার্থী আসল প্রতিযোগিতায় থাকছেন। ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের গঠন চূড়ান্ত হবে। এরপরই নতুন সভাপতি নির্বাচনের পালা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন এক রূপান্তরের সময় পার করছে। বিশ্বকাপে নিয়মিত ভালো করার স্বপ্ন, ঘরোয়া ক্রিকেটকে শক্তিশালী করা এবং নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করা—এসবেই নির্ভর করবে পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতা।
তামিম ইকবালের মতো এক কিংবদন্তি ক্রিকেটারের বিসিবি নির্বাচনে না আসা হয়তো অনেকের জন্য হতাশার। তবে এটি হয়তো তার ব্যক্তিগত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আসন্ন নির্বাচন তাই আরও আলোচিত হয়ে উঠেছে।
যে সিদ্ধান্তই আসুক, ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করেন—বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করবে নতুন নেতৃত্ব।
MAH – 13109 I Signalbd.com