অর্থনীতি

৩ মাসে আয় ৯৯ কোটি টাকা, আয়ের অর্ধেকই মুনাফা

সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (BSCCL) ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) করেছে চমকপ্রদ আয় এবং বিশাল মুনাফা। কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে কোম্পানিটি আয় করেছে ৯৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যার মধ্যে প্রায় ৪৮ কোটি টাকাই নিট মুনাফা।

অর্থাৎ, আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—এই তিন মাসে কোম্পানিটির প্রতি ১ টাকা আয়ের বিপরীতে প্রায় ৫০ পয়সাই ছিল মুনাফা। এটি দেশের যেকোনো সরকারি শেয়ারবাজার–তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ব্যতিক্রমী সফলতা।

মুনাফা বেড়েছে ১৯ শতাংশ, আয় সামান্য বৃদ্ধি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত তথ্যমতে, সাবমেরিন কেব্‌লসের চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা প্রায় ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

সময়কালআয় (কোটি টাকা)মুনাফা (কোটি টাকা)
জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪৯৭.২০৪০.৪৫
জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫৯৯.৪২৪৮.০০

আয়ের দিক থেকে অবশ্য কোম্পানিটির বড় ধরনের বৃদ্ধি হয়নি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে মাত্র ২ কোটি ২২ লাখ টাকা, অর্থাৎ প্রায় ২.২৮ শতাংশ

তবে আয় বাড়ার তুলনায় মুনাফা বাড়ার হারই বেশি হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, কোম্পানিটি তাদের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে অত্যন্ত কার্যকরভাবে।

৯ মাসের হিসাবেও শক্তিশালী অবস্থানে BSCCL

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত অর্থবছর ধরে পরিচালিত হয়। সেই হিসাবে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির ৩টি প্রান্তিক শেষ হয়েছে।

৯ মাসে কোম্পানিটির পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে:

সময়কালমোট আয় (কোটি টাকা)নিট মুনাফা (কোটি টাকা)
জুলাই ২০২৩ – মার্চ ২০২৪৩৩৮১৬৮
জুলাই ২০২৪ – মার্চ ২০২৫২৯৪১৪০

এখানে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আয় কিছুটা কমে এসেছে— ৪৪ কোটি টাকার ঘাটতি, তবে মুনাফা শতকরা হার হিসাবে প্রায় একই জায়গায় আছে। অর্থাৎ, আয় কমলেও লাভজনক কার্যক্রম ধরে রেখেছে কোম্পানিটি।

আয় কমার পেছনে সম্ভাব্য কারণ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আয় কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে থাকতে পারে:

  1. ডেটা ব্যান্ডউইথ রেটের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা: বিদেশি ব্যান্ডউইথ প্রোভাইডারদের কম দামে সেবা দেওয়া।
  2. স্থানীয় ISP ও অপারেটরদের চাহিদা পরিবর্তন: কিছু অপারেটর এখন বিকল্প সাবমেরিন কেব্‌ল বা VSAT ব্যবহার করছে।
  3. টেকনিক্যাল আপগ্রেড বিলম্ব: নতুন ক্যাপাসিটি বা কেব্‌ল ইনফ্রাস্ট্রাকচার আপগ্রেড না হওয়া।

তবে মুনাফা ধরে রাখার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে চতুর ব্যয় সংকোচন ও রেভিনিউ অপ্টিমাইজেশন স্ট্রাটেজি

বিনিয়োগকারীদের জন্য কী বার্তা?

সাবমেরিন কেব্‌লস দীর্ঘদিন ধরে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে সচেতন একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ধারাবাহিক মুনাফা এবং উচ্চ লাভের হার বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক।

বর্তমানে BSCCL শেয়ারের বাজারদর ১২৫-১৩০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। তবে চলতি অর্থবছরের শেষ (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকেও যদি এই রকম মুনাফা ধরে রাখা যায়, তাহলে বার্ষিক লভ্যাংশ আরও আকর্ষণীয় হতে পারে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, BSCCL যদি নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে আরও জোর দেয়, তবে তাদের আয় ও মুনাফা আরও বাড়বে:

  • তৃতীয় সাবমেরিন কেব্‌ল যুক্তকরণ (SMW-7 বা SEA-ME-WE-7)
  • ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড সার্ভিসে প্রবেশ
  • ISPs ও মোবাইল অপারেটরদের জন্য নতুন স্ল্যাব/প্যাকেজ
  • ব্যান্ডউইথ রপ্তানি বৃদ্ধি (বিশেষত নেপাল, ভুটান ও পূর্ব ভারতের দিকে)

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন তাদের স্থিতিশীল ও লাভজনক অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। আয় কিছুটা কমলেও তাদের মুনাফা ধরে রাখার দক্ষতা এবং বিনিয়োগকারী বান্ধব ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button