অর্থনীতি

৫ বছরে সর্বনিম্ন বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২০২৪ সালে

২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি এসেছে ব্যাংকিং খাতে, যার পরিমাণ ৪১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর পোশাক শিল্পে এসেছে ৪০৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ।

এই দুটি খাতই ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলেও, অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ আশানুরূপ হয়নি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য প্রযুক্তি, অবকাঠামো, এবং কৃষি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগে আস্থাহীনতা

বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে।

বিনিয়োগ বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সাবেক চেয়ারম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা এমন একটি বার্তা দিচ্ছে যে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিরাপদ নয়। ফলে নতুন বিনিয়োগ না এসে, পুরাতন বিনিয়োগের রক্ষণাবেক্ষণেই অধিক মনোযোগ দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।”

আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা ও বাংলাদেশের অবস্থান

প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া ইতোমধ্যে তাদের বিনিয়োগ নীতিতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার এনেছে। ভিয়েতনাম, এক সময় বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনীয় এফডিআই পেত, বর্তমানে তা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ওই দেশগুলো উৎপাদন খাত, তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে নিজেদের আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করেছে। এর বিপরীতে, বাংলাদেশ এখনও অবকাঠামো ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্নীতির মতো সমস্যায় জর্জরিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বাংলাদেশ দ্রুত বিনিয়োগবান্ধব সংস্কার না আনে, তাহলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশটির প্রতিযোগিতা ক্ষমতা ক্রমেই কমে যাবে।

সম্ভাবনার পরিসর ও আশার আলো

তবে অন্ধকারের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন সহযোগী ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা নতুন সম্ভাবনার দিকে নজর দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের বড় অভ্যন্তরীণ বাজার, কর্মক্ষম যুব জনসংখ্যা, এবং স্ট্র্যাটেজিক ভৌগোলিক অবস্থান এখনও অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে আকর্ষণীয়।

সরকারও একাধিক ইকোনোমিক জোন, প্রযুক্তি পার্ক ও বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ করছে। পাশাপাশি বিডা, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন নীতিমালা সহজ করছে।

তবে এগুলোর বাস্তবায়ন এবং কার্যকারিতা এখনও সময়সাপেক্ষ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button