শ্রমিক অধিকার রক্ষায় আইবিসির জোর, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সংস্কার দাবি

প্রেক্ষাপট ও ঘটনার পটভূমি
বিগত কিছু দিনে শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিক নেতাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক জোট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি), এক জনসাধারণের সম্মুখে অবস্থানের দাবি তুলে ধরেছে। এই দাবির মূল বিষয়গুলোতে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শ্রম আইন সংশোধন, ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজ করা, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি সরকারি, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে চুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিও রয়েছে।
আইবিসি-এর নেতারা বলছেন, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদান করতে গেলে বর্তমান পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে নীতি স্পষ্ট না হওয়ার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে শাসনচক্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে – যা শ্রমিকদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা দাবিসমূহ
০৮ থেকে ০৯ মাসের মধ্যে দেশের প্রায় ৮০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়ে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতা প্রেক্ষাপটে আইবিসি-এর নেতারা নিম্নলিখিত দাবি তুলে ধরেন:
- শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ:
দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের হঠাৎ করে ছাঁটাই করা হয়। এতে শ্রমিকদের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। আইবিসির দাবি, শ্রমিকদের ছাঁটাই বন্ধ করা হবে যাতে কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আসে। - মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার:
শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ কিংবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলা দায়ের করার ঘটনা চলমান। আইবিসি নির্দেশ করে, যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে পারে, তাহলে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায় করা মিথ্যা মামলা কেন অব্যাহত থাকে – এ নিয়ে স্পষ্ট ও স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। - শ্রম আইন সংশোধন:
বর্তমান শ্রম আইন ও নীতি, যা কিছু প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করেছে, তা আধুনিক সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নি। শ্রমিকদের অধিকার ও সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আইনের পুনঃসংস্কার করা অপরিহার্য। আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক মানদণ্ড বিবেচনায়, নতুন নতুন দফা যুক্ত করে আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে। - ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা:
শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন এবং কার্যক্রমে নানা ধরনের বাধা রয়েছে। আইবিসি দাবি করে, ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করে অধিক সংখ্যক শ্রমিক সংগঠন তৈরি করতে হবে, যাতে শ্রমিকদের সংগঠনভুক্তি বৃদ্ধি পায়। - ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ ও পুনর্বাসন:
বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয় না। এই তথ্য উন্মুক্ত না থাকায় পুনর্বাসনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ করে পুনর্বাসন নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে। - মজুরি বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুবিধার বাস্তবায়ন:
সরকার পক্ষ থেকে ঘোষিত ৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির আয়োজন বেশিরভাগ কারখানায় কার্যকর হয়নি। এছাড়া, উৎসব ভাতা ইত্যাদি সুবিধার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উপর এই ব্যর্থ প্রভাবের দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
বাস্তবতা ও শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার অবস্থা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন যে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মার্চ মাসের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি ও উৎসব ভাতা পরিশোধের কথা ছিল। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা অমান্য করে কাজ করায় শ্রমিকরা আতঙ্ক ও অসহায়তার মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিবিসি-এর নেতারা বলেন, “প্রতিদিন কোথাও না কোথাও শ্রমিকেরা মজুরি, অন্যান্য সুবিধা, ইনক্রিমেন্ট, চাকরি রক্ষা ইত্যাদি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন।” এই আন্দোলন শ্রমিকদের জীবিকা ও মানবিক মর্যাদাকে সুরক্ষিত করতে অপরিহার্য বলে তাদের যুক্তি।
গত ৮-৯ মাসে পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। ফলস্বরূপ, প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হতে দেখেছি। শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকের যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, এবং পুনর্বাসনের কার্যক্রম এখনো নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয় না। এই বাস্তবতা, বিশেষ করে ঈদের আগের দিন শ্রম ভবনের সামনে সংঘটিত আন্দোলন ও এর ফলাফলের মধ্য দিয়ে উদঘাটিত হয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ
নিরাপদ ও স্বচ্ছ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম মূল চাবিকাঠি। তবে বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আইবিসির সভাপতি তৌহিদুর রহমানের মতে, “এখনো ৫০ টির বেশি ট্রেড ইউনিয়নের আসন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে, যা শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে তুলেছে।”
শ্রমিক ফেডারেশনগুলো দলের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে তাদের কার্যকর ভূমিকা ও সমন্বয় অনেকাংশেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ সেচ্ছায়, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠন করে ফেডারেশনগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
শ্রম আইনের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের দিশা
বর্তমান শ্রম আইন ও নীতিমালা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও অঞ্চল যেমন আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে বাস্তবায়িত হলেও অন্যান্য অনেক কারখানায় এদের কার্যকরী বাস্তবায়ন হয়নি। আইবিসির নেতারা অভিযোগ জানায়, “শ্রম আইন বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিলছে না। সমাজ ও শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের পরিবর্তিত প্রয়োজন ও আধুনিক চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইতে হলে আইনকে সংশোধন করে নতুন দফা ও নীতিমালা গ্রহণ করা আবশ্যক।”
আধুনিক শ্রম আইন শুধু শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করবে না, বরং প্রতিষ্ঠান ও মালিকদেরও নির্দিষ্ট মান ও দায়িত্ব আরোপ করবে, যাতে কর্মক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শ্রম আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: পাল্টা শুল্ক এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রভাব
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক বিষয়ক সিদ্ধান্তে অস্থিরতার প্রভাব। আইবিসির নেতারা জানিয়েছে যে, যদিও সরকার ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবুও শ্রমিকদের মধ্যে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট স্থায়িত্ব আসে নি। পাল্টা শুল্ক স্থগিত থাকলেও, তাদের আশঙ্কা রয়েছে – শুল্কের পুনরায় আরোপ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে তাদের জীবিকা আরও প্রভাবিত হতে পারে।
বিশ্ববাজারে শুল্কনীতি সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু শীর্ষ অর্থনৈতিক খেলোয়াড়দের মধ্যেই নয়, বরং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাওন্সিলের মতো শ্রমিক সংগঠনেরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে, বাজারের অস্থিরতা ও শুল্ক পরিবর্তনে শুধু বিনিয়োগকারীর মনোভাব নয়, বরং শ্রমিকদের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব পড়ছে।
সমাধানের পথে: কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর প্রয়োগ অপরিহার্য মনে করা হচ্ছে:
- শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা:
- শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে হঠাৎ করে কর্মী ছাঁটাই বন্ধ করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
- ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
- মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা:
- রাজনৈতিক চাপ বা অন্য কোন অকারণবশত দায় করা মামলা, যা শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা হয়, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
- শ্রম আইন সংস্কার ও আধুনিকায়ন:
- বর্তমান শ্রম আইন ও নীতিমালার পর্যালোচনা করে, আধুনিক দেশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করা।
- শ্রমিকদের অধিকারের পাশাপাশি মালিকদের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বও সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
- ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ:
- শ্রমিক সংগঠনের নিবন্ধন সম্পর্কিত প্রশাসনিক জটিলতা দূর করে, সহজ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালু করা।
- ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে যৌথ সমন্বয় বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ফেডারেশন গঠন করা।
- সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৮ দফা সমঝোতা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন:
- শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিটি দফা যথাযথভাবে কার্যকর করা যেন শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত হয়।
- শ্রমিক দিবসের অর্থে আদায়ের প্রতিবাদ ও মহাসমাবেশের মাধ্যমে দাবিগুলো সামনে আনা।
- আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ ও নীতি স্পষ্টকরণ:
- পাল্টা শুল্ক বিষয়ের মধ্যে, সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগকে আরও জোরালো করে তুলে ধরা প্রয়োজন, যাতে শ্রমিক ও শিল্পক্ষেত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমে।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে স্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করা।
শ্রমিক আন্দোলনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
সংবাদ সম্মেলনে আইবিসি-এর নেতারা স্পষ্ট করেছেন, “জীবিকা না থাকলে শ্রমিক কোথায় যাবে?” — এই প্রশ্নই বর্তমান পরিস্থিতির সঠিক বাস্তবতা বহন করে। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উপর মজুরি বৃদ্ধি, উৎসব ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার যথাযথ পরিশোধ না হলে, তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
শ্রমিক সংগঠনের দাবিতে দেখা যায়, শিল্পক্ষেত্রে শুধু শ্রমিকদের অধিকার নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি সুসংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের গুরুত্ব রয়েছে। গত ৮-৯ মাসে পোশাক কারখানার বন্ধ হওয়ার কারণে যারা কর্মহীন হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের মজবুত অর্থনীতির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়া কঠিন।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যতের দিশা
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বয় সাধন করে, শ্রমিক আন্দোলনের সার্বিক কাঠামোকে মজবুত করা জরুরি। আইবিসির নেতারা বলেন, “ব্যক্তিগত বা ছোট ছোট সংঘর্ষের চেয়ে বৃহত্তর ও সমন্বিত আন্দোলন সফল হবে।”
এই ধরনের সমন্বয় দেশের উৎপাদনশীলতা ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া ও বিভিন্ন এশিয়ান দেশগুলোর মতো ক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘঠিত হয়ে দেশের অর্থনীতিকে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ দিক থেকে এগিয়ে নিয়েছে।
শ্রমিক সংঘঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নিরপেক্ষ বিচার ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারলে, দেশের শিল্পক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আসবে। একইসাথে, শ্রমিক আন্দোলনের এই সমন্বিত চেষ্টায় মালিক ও সরকারেরও দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে দেশ উন্নয়নের নতুন দিশার সূচনা করবে।
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শ্রম আইন সংশোধনের দাবিতে আইবিসির এই প্রস্তাব শুধুমাত্র শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক।
কারখানায় হঠাৎ করে হয়ে যাওয়া ছাঁটাই, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অসংযত মামলা ও অনুপযুক্ত শ্রম আইন—এই সমস্ত বিষয় দেশের উৎপাদনশীলতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের খাতিরে বড় ধরনের অখণ্ডতা ভঙ্গ করছে।
সরকার, শিল্প মালিক ও শ্রমিক সংগঠন যেন একত্রিত হয়ে এই দাবিগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হন, তা দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
শ্রমিক দিবসের মহাসমাবেশের মাধ্যমে দাবির আওয়াজ তোলা, ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা ও শ্রম আইনকে যুগোপযোগী করে তোলা—এসব উদ্যোগের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষিত হবে এবং দেশের মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে।
যখন শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা তাদের অধিকার রক্ষায় জোরালো আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন, তখন দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের ওপর চাপ দিয়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
এই ধরনের সম্মিলিত উদ্যোগই আজকের অনিশ্চিত বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন আশার আলো এনে দিতে পারে।