২৪ সালে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল আকাশচুম্বী

বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার অভূতপূর্ব গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থা (আইআরইএনএ) প্রকাশিত “রেনিউয়েবল ক্যাপাসিটি স্ট্যাটিস্টিকস ২০২৫” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৪৪৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। এটি গত বছরের তুলনায় এক বিশাল অর্জন এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সৌর শক্তির প্রধান অবদান
২০২৪ সালের নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধিতে সৌর শক্তির অবদান ছিল সর্বাধিক। আইআরইএনএ-এর তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক সৌর শক্তির মোট ক্ষমতা ১,৮৬৫ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, যা নবায়নযোগ্য শক্তির বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রতিফলন।
অলৌকিক বৃদ্ধি: ২০২৩ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির মোট ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ৫৮৫ গিগাওয়াট। কিন্তু ২০২৪ সালে এই বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯২.৫ শতাংশ, যা বার্ষিক ১৫.১ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
২০৩০ সালের লক্ষ্যের পথে
আইআরইএনএ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধির এই সাফল্য সত্ত্বেও, ২০৩০ সালের নির্ধারিত বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণে এখনো অনেক পথ বাকি। ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য শক্তির ধারণ ক্ষমতা ১১.২ টেরাওয়াটে পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধি ১৬.৬ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে।
এশিয়ার ভূমিকা
বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধিতে এশিয়ার বিশেষ অবদান রয়েছে। গত কয়েক বছরে এশিয়ায় সৌর শক্তির ক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে এশিয়া অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তির সংযোজন ছিল ২৪৭.৯ গিগাওয়াট, যা ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৩২৭.১ গিগাওয়াট।
চীন ও ভারতের বড় ভূমিকা:
- চীনে একাই নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা ২৭৮.০ গিগাওয়াট বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ভারতে এই বৃদ্ধি হয়েছে ২৪.৫ গিগাওয়াট।
- দক্ষিণ কোরিয়াও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত ৩.১ গিগাওয়াট সৌর শক্তি সংযোজন হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রবণতা
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় আরও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার চেয়ে অনেক উপরে রয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলোও নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণের মোট ৯২.৫ শতাংশ অংশ এসেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮৫.৮ শতাংশ। এটি নবায়নযোগ্য শক্তির ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতা ও বিনিয়োগের প্রতিফলন।
নবায়নযোগ্য শক্তির অগ্রযাত্রা
নবায়নযোগ্য শক্তির অংশীদারিত্ব বাড়ছে, যা ২০২৩ সালে ৪৩.১ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৪৬.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের প্রতিফলন।
জলবিদ্যুৎ শক্তির প্রসার
২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুৎ ক্ষমতা ১৫.০ গিগাওয়াট বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ১১.৩ গিগাওয়াট।
বিশেষত, এই বৃদ্ধির ৯৬.০ শতাংশ চীন থেকে এসেছে। তবে অন্যান্য দেশ যেমন:
- পাকিস্তান
- ইথিওপিয়া
- ভিয়েতনাম
- তানজানিয়া
- ইন্দোনেশিয়া
- নেপাল
এদের ক্ষেত্রেও জলবিদ্যুৎ শক্তির ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সত্ত্বেও, ২০৩০ সালের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় উদ্যোগ:
- বার্ষিক বৃদ্ধির হার বজায় রাখা: প্রতি বছর নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা ১৬.৬ শতাংশ বাড়াতে হবে।
- নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি: নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।
- সাশ্রয়ী প্রযুক্তির প্রসার: নবায়নযোগ্য শক্তির প্রযুক্তি আরও উন্নত ও সাশ্রয়ী করে তুলতে হবে।
- নীতিগত সমর্থন: পরিবেশবান্ধব শক্তির জন্য নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
উপসংহার
২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক শক্তি ব্যবস্থায় নবায়নযোগ্য শক্তির ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতা এবং সম্প্রসারণ স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়েছে। যদিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবুও ২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বৈশ্বিক সম্প্রদায় যদি টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে চায়, তবে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে বিনিয়োগ ও নীতি-নির্ধারণে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।