অর্থনীতি

আরও ৩১ কোটি ডলার কিনবে বাংলাদেশ ব্যাংক

Advertisement

ডলারের অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে আবারও বড় পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর থেকে ৩১ কোটি ৩ লাখ ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা করছে আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান।

মূল সিদ্ধান্ত: ৩১ কোটি ডলার কেনার ঘোষণা

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আরও একধাপ এগোলো বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করেছে, তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে মোট ৩১ কোটি ৩ লাখ ডলার কিনবে। প্রতি ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাজারে অতিরিক্ত ডলার সরবরাহের চাপ কমিয়ে, রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়কারীদের জন্য একটি সহনীয় হার বজায় রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কারা বিক্রি করবে এই ডলার?

জানা গেছে, দেশের ২২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে এই ডলার কেনা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বাজারে অস্থিরতা রোধে এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।”

১৭০ কোটি ডলার কেনা হয়েছিল আগেও

এই ঘোষণা নতুন নয়। মাত্র দুই দিন আগেই, গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ১৭০ কোটি ডলার কিনেছিল। তখনো একই উদ্দেশ্যে—ডলারের দরপতন ঠেকানো এবং বাজারে স্থিরতা আনা। ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের অতিরিক্ত সরবরাহ সংকুচিত করতে চাচ্ছে।

কেন এই সিদ্ধান্ত?

ডলারের দাম কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর আগ্রহও কমে যাচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে বাজার থেকে অতিরিক্ত সরবরাহ তুলে নেওয়া হলে, রেট স্থিতিশীল হবে এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের মত: কী বলছেন অর্থনীতিবিদরা?

অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. মাহফুজ আহমেদ বলেন,
“বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ স্বল্পমেয়াদে বাজারে ভারসাম্য ফেরাতে সহায়ক হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। কেবল ডলার কেনা-ই সমস্যার সমাধান নয়।”

অন্যদিকে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা আশা করছেন, বাজার মনোবল ফিরে পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।

রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯.৫ বিলিয়ন ডলারে, যা কিছুটা উন্নত হলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার নিচে। ধারাবাহিকভাবে ডলার কেনার ফলে রিজার্ভ সামান্য বাড়লেও তা এখনো পূর্বের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়নি।

ডলারের দাম গত দুই মাসে ১২৪ টাকা থেকে কমে বর্তমানে ১২১.৫০ টাকায় এসেছে। এই পতন রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

স্থিতিশীলতা ফেরাতে আরও পদক্ষেপ দরকার

বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক পদক্ষেপ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবে শুধু ডলার কেনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান আসবে না।

দেশে রপ্তানি খাতকে পুনর্জীবিত করা, রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রণোদনা দেওয়া এবং অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

“এই সিদ্ধান্তে রপ্তানিকারকেরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন”—এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা কী?

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ডলার কেনা কার্যক্রম একটি সাময়িক স্বস্তি দিতে পারলেও, দীর্ঘমেয়াদে বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, রেমিট্যান্স হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।

এম আর এম – ০৩৫৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button