বিআইডিএসের নতুন মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক

সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) নতুন মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন অধ্যাপক এ কে এনামুল হক। আজ বৃহস্পতিবার তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি বিআইডিএসের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। বিআইডিএস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অধ্যাপক এনামুল হকের আগে মালয়েশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ শাখার সহ-উপাচার্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
একজন পরিবেশ অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক এনামুল হকের দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর, বিশেষ করে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি এবং শহরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা রয়েছে।
দীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপক এনামুল হক বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন), সেভ দ্য চিলড্রেন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), ইউএনডিপিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক এনামুল হক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কানাডার অন্টারিওর গ্যলফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ন্যাচারাল রিসোর্স ইকোনমিকসের’ ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপক এনামুল হকের কর্মজীবন এবং অবদান
অধ্যাপক এ কে এনামুল হকের কর্মজীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়। তিনি শুধু একজন শিক্ষাবিদই নন, বরং একজন প্রাজ্ঞ গবেষক এবং উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ হিসেবেও সুপরিচিত। তাঁর কাজের পরিধি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই বিস্তৃত।
শিক্ষকতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান:
অধ্যাপক এনামুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতার মাধ্যমে। এখানে তিনি বহু বছর ধরে শিক্ষার্থীদের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি এবং বিষয়বস্তুর গভীরতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এরপর তিনি মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ শাখার সহ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে তিনি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
গবেষণা এবং প্রকাশনা:
অধ্যাপক এনামুল হকের গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র হলো পরিবেশ অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি অর্থনীতি এবং নগর উন্নয়ন। এই বিষয়গুলোতে তাঁর অসংখ্য গবেষণাপত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গবেষণার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিবেশগত এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছেন। তাঁর কাজ নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে, যা টেকসই উন্নয়নের পথ নির্দেশ করে।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় অবদান:
অধ্যাপক এনামুল হক বিশ্বব্যাংক, আইইউসিএন, সেভ দ্য চিলড্রেন, আইএফসি এবং ইউএনডিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রাখেন। এই সংস্থাগুলোতে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক এবং বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা অনেক প্রকল্পের সাফল্য নিশ্চিত করেছে। তিনি বিশেষত বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে তাঁর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেছেন।
নীতি নির্ধারণে ভূমিকা:
অধ্যাপক এনামুল হকের গবেষণা এবং পরামর্শ বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর কাজ জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি এবং নগর উন্নয়ন সম্পর্কিত নীতি প্রণয়নে সহায়ক হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার সাথে কাজ করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নীতি নির্ধারণে অবদান রেখেছেন।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক হিসেবে প্রত্যাশা:
বিআইডিএসের মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক এনামুল হকের নিয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়ন গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে বিআইডিএস আরও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা এবং নীতি পরামর্শ প্রদানে সক্ষম হবে। তাঁর নেতৃত্বে বিআইডিএস বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
বিআইডিএস সম্পর্কে কিছু তথ্য:
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে এবং নীতি নির্ধারণে সরকারকে সহায়তা করে। বিআইডিএস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
অধ্যাপক এনামুল হকের মতো একজন অভিজ্ঞ এবং যোগ্য ব্যক্তির বিআইডিএসের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি বড় সুযোগ। তাঁর নেতৃত্বে বিআইডিএস নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা।