অর্থনীতি

মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর শুল্ক–কর কমানোর সুপারিশ

মোবাইল ফোন সেবার ওপর বিদ্যমান কর ও শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। তারা দাবি করেছে, সাধারণত বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যে এই ধরনের কর আরোপ করা হয়ে থাকে, কিন্তু মোবাইল ফোন সেবা জনগণের মৌলিক প্রয়োজনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, এ খাতে অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দিলে তা সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা সৃষ্টি করবে।

আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাজেট সংলাপে মোবাইল অপারেটররা এই দাবি উত্থাপন করেন। এনবিআরের আগারগাঁও কার্যালয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অপারেটররা মোবাইল ফোন সেবায় আরোপিত ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ কমানোর সুপারিশ করেন।

সিম সরবরাহের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

অপারেটররা আরও দাবি করেন যে, মোবাইল ফোনের নতুন সংযোগ (সিম) বিক্রির ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করা উচিত। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিকম সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার অতিরিক্ত কর আরোপ করছে, যা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিকম সেবায় (টকটাইম, ইন্টারনেট ইত্যাদি) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছিল। তবে মাত্র ৯ দিনের মাথায় সরকার আবার আগের ২০ শতাংশ হার পুনর্বহাল করেছিল। এখন অপারেটররা এই কর পুরোপুরি তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

করপোরেট কর কমানোর সুপারিশ

আজকের আলোচনায় মোবাইল অপারেটররা করপোরেট করের হার কমানোর দাবিও উত্থাপন করেছেন। বর্তমানে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে কর হার ৪০ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে, সাধারণ করপোরেট করের হার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূতদের জন্য ২৭.৫ শতাংশ। মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন যে, তাদেরও অন্যান্য কোম্পানির মতো কর কাঠামোর আওতায় আনা উচিত।

অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, “বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন অপারেটররাই সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে বাংলাদেশে সরকার প্রতি বছর এই খাতে করের হার বৃদ্ধি করছে, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের ওপরই আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে কর বৃদ্ধির ফলে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এই প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

টেলিযোগাযোগ খাতে করের প্রভাব

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং ইন্টারনেট সংযোগ বৃদ্ধি পেলেও টেলিযোগাযোগ খাতে কর ও শুল্ক বৃদ্ধি গ্রাহকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অপারেটরদের দাবি, অতিরিক্ত কর আরোপের ফলে মোবাইল সেবার ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা প্রত্যক্ষভাবে দেশের ডিজিটাল উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোবাইল ফোন এখন কেবল বিলাসবহুল পণ্য নয়, বরং এটি শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা, চাকরিজীবী এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, এই খাতে কর কমানো হলে মোবাইল সেবার ব্যয় হ্রাস পাবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

উপসংহার

মোবাইল অপারেটরদের এই সুপারিশের বিষয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে গ্রাহকদের অর্থনৈতিক চাপ কমানোর স্বার্থে মোবাইল সেবায় আরোপিত অতিরিক্ত কর ও শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী বাজেটে এনবিআর মোবাইল অপারেটরদের দাবি মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের সংশ্লিষ্টরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button