অর্থনীতি

দেশের অর্থনীতি নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই অবগত এবং এটি নিয়ে অযথা উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পৃথক দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে প্রস্তুতি

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সরকার একটি ‘মসৃণ উত্তরণ কৌশল’ (এসটিএস) অনুসরণ করছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “স্মুট মানে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া নয়, বরং বিমানের অবতরণের মতো এবং আমরা এটির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স সন্তোষজনক। বিশ্বে অনেক দেশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছে। “এমনকি অনেক দেশ বলছে, যদি বাংলাদেশ এটি করতে পারে, তাহলে তারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে। আমরাও দেখব আমাদের গর্ব আরও বাড়বে। হয়ত কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে, তবে আমরা সে ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাস ব্যবস্থাপনা

অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের জট দূর করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। পণ্য খালাসের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন এবং সরবরাহ ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ হবে।

বাজারে ভোজ্যতেলের প্রাপ্যতা

বাজারে ভোজ্যতেল ও সয়াবিন তেলের সরবরাহ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় নানা কৌশল অবলম্বন করে, তবে এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীরা যতই চালাক হোক না কেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের আরও বুদ্ধিমান হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং তারা যথাযথভাবে তদারকি করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার মন্তব্য ও আন্তর্জাতিক প্রভাব

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।”

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক সম্পর্ক সবসময়ই বিভিন্ন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থান

দ্য গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিকের সাম্প্রতিক নিবন্ধ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আগে আমরা খাদের কিনারায় ছিলাম, কিন্তু এখন আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি এবং এগিয়ে চলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনেক কিছু লেখা হয়। বাইরের সবাই কি সবকিছু জানে? তারা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামত দিয়ে লেখে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বাস্তব অবস্থা জানতে হলে, দেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।”

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে করণীয়

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে কী করণীয় সে বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন:

  • সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা: অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও স্বচ্ছ হতে হবে এবং দুর্নীতি কমাতে হবে।
  • বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও সহজ নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।
  • রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণ: পোশাক খাত ছাড়াও অন্যান্য শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
  • মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি: তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার।
  • অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস: গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাড়াতে হবে।

উপসংহার

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে হলে সরকারকে আরও সুপরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সামগ্রিকভাবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, বরং পরিকল্পিতভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button