ভোজ্য তেলে কর ছাড় ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ

ভোজ্য তেল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ও কর ছাড়ের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। বর্তমান মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ শেষ হতে চলেছে। বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে এই সিদ্ধান্তের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন এই সুপারিশ জানায়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে কর ছাড়ের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।
কর ছাড়ের বর্তমান অবস্থা
সরকার গত ১৫ ডিসেম্বর সয়াবিন তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। এর ফলে আমদানিকৃত তেলের ওপর শুল্ককর হ্রাস পায়, যা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। তবে বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, এই সুবিধার মেয়াদ আরও বাড়ানো দরকার।
বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য পরিস্থিতি
গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের বিনিময় হার ও আমদানি ব্যয়ের কারণে মূল্য স্থিতিশীল রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশীয় বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ১৬০-১৭০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৪৫-১৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের কারণ
ট্যারিফ কমিশনের মতে, কর ছাড়ের এই সুবিধা অব্যাহত রাখলে:
- ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় থাকবে – আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
- ভোক্তারা উপকৃত হবেন – কম দামে তেল পেতে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবেন।
- বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকবে – আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে তেল আনতে পারবেন, ফলে ঘাটতির আশঙ্কা কমবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত কী হতে পারে?
সরকার সাধারণত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সুপারিশের ভিত্তিতে কর সুবিধা বাড়িয়ে থাকে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার সাধারণত কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ও কর ছাড় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই ধরনের কর ছাড় বাজেট ঘাটতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সরকারকে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ ভোজ্য তেল পরিশোধন ও বিপণন সমিতির এক মুখপাত্র জানান, “সরকার যদি কর ছাড়ের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ায়, তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং ব্যবসায়ীরা সহজে তেল আমদানি করতে পারবেন।”
অন্যদিকে, সাধারণ ভোক্তারা আশা করছেন, এই সুবিধার মেয়াদ বাড়ালে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম আর না বাড়বে না। একজন ক্রেতা বলেন, “বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরকার যদি কর ছাড় অব্যাহত রাখে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দীর্ঘমেয়াদে কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র কর ছাড়ই নয়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিকল্প উৎস থেকে তেল আমদানির বিষয়েও চিন্তা করা প্রয়োজন।
এখন দেখার বিষয়, সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কর ছাড়ের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়াবে কি না।