বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, হুতিদের ওপর মার্কিন হামলার জের

ইরান–সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। গতকাল সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।
হামলার প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিরা ১০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে। হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও পাঠানো ড্রোন জব্দ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যয়বহুল সামরিক অভিযান চালাতে হচ্ছে। তবে এত দিন মার্কিন প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা বিশেষ কাজে আসেনি। এ কারণেই ইরান–সমর্থিত এই গোষ্ঠীর ওপর নতুন করে হামলা শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তেলের দাম বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
হামলার জেরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে গতকাল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়ে ৭১ দশমিক ৩ ডলার হয়েছে। আমেরিকায় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম হয়েছে ৬৭ দশমিক ৯০ ডলার। আজও দাম বেড়েছে; ব্রেন্ট ক্রুডের দাম হয়েছে ৭১ দশমিক ৩২ ডলার এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম হয়েছে ৬৭ দশমিক ৮৩ ডলার।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম তেমন একটা বাড়েনি। গত জানুয়ারিতে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা আবার ৭০ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। মূলত বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি, বিশেষ করে চীনের অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অতীতের দাম পরিবর্তন
দীর্ঘদিন দাম কম থাকার পর ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩৯ মার্কিন ডলারে ওঠে। সে বছর গড়ে তেলের দাম ১০০ ডলারের ওপর ছিল।
এর পর থেকে দাম অবশ্য কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ৯৮ মার্কিন ডলারে উঠেছিল, গড় দাম ছিল ৮৩ ডলার। তেলের দাম বাড়ানোর জন্য জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর প্রভাবশালী সংগঠন ওপেকের পক্ষ থেকে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও দাম তেমন একটা বাড়েনি।
ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যানুসারে, চলতি ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি থাকবে। দৈনিক চাহিদার চেয়ে ছয় লাখ ব্যারেল তেল বেশি সরবরাহ থাকবে বলে তাদের পূর্বাভাস। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোও আগে সেরকম আভাস দিয়েছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে চীনের চাহিদা কম থাকা—এ দুই কারণে সরবরাহ বেড়ে যাবে। ফলে চলতি বছরে তেলের দাম তেমন একটা বাড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।