মার্চের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স ১৬৫ কোটি ডলার

চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসীরা ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। রোববার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করে।
রেমিট্যান্সের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি চার লাখ ছয় হাজার ৬৬৬ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সাধারণত রমজান ও ঈদের সময় প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, যা এ বছরও অব্যাহত রয়েছে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে গড়ে প্রতিদিন দেশে এসেছিল ছয় কোটি ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার ডলার। অন্যদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি দুই লাখ ৭২ হাজার ৮৫৭ ডলার।
ব্যাংকভিত্তিক রেমিট্যান্সের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স।
- রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক: ৩৭ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার
- রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংক: ১৩ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার ডলার
- বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক: ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার
- বিদেশি ব্যাংক: ৩১ লাখ ডলার
রমজান ও ঈদের প্রভাব
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে রমজান মাসে পরিবার-পরিজনের অতিরিক্ত খরচ মেটাতে প্রবাসীরা দেশে বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠান। এর ফলে, রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, রমজানের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—পরিবারের জন্য বিশেষ কেনাকাটা, দান-সদকা ও ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি। একইসঙ্গে, অনেক প্রবাসী তাদের আত্মীয়দের আর্থিক সহায়তা করতে এ সময়ে বেশি অর্থ পাঠান।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ ও সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া নীতিগত পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো সহজতর করায় প্রবাসীরা এখন হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছেন। এছাড়া, সরকারের ঘোষিত নগদ প্রণোদনা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহজলভ্যতাও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে এবং মার্চ মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।
অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো প্রবাসী আয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি রেমিট্যান্স প্রবাহকে আরও উৎসাহিত করতে পারে, তবে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। ব্যাংকিং চ্যানেল আরও সহজলভ্য ও দ্রুতগামী করলে প্রবাসীরা বেশি উৎসাহিত হবেন বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে।
উপসংহার
প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, রমজান মাস ও ঈদের সময় এ প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পায়। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।