বিগত সরকারের সময় অর্থনৈতিক তথ্য ছিল ‘গোঁজামিল নির্ভর’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, বিগত সরকারের সময় প্রদত্ত অর্থনৈতিক তথ্য ছিল গোঁজামিল নির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশনা দিয়ে সেসব তথ্য নিজেদের মত করে উপস্থাপন করা হতো।
১৫ মার্চ এফডিসিতে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার সঠিক পথে আছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, “অর্থনৈতিক ডাটা কীভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, বাংলাদেশ ছিল তার মধ্যে একটি অগ্রগণ্য দেশ।” তিনি জানান, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক হারে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্ত পূরণ করা কঠিন হতে পারে। তিনি চীনের ঋণের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কোনোভাবেই আমাদের ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। তিনি উল্লেখ করেন, “ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো।” তিনি আরও বলেন, “সরকার যেভাবে চাইতো বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান প্রদান করতো।”
এই ধরনের তথ্য বিকৃতি দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক ও নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত, যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই ও সমন্বিত হয়।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে, শুল্ক সুবিধা না থাকায় রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া, জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগিতা হ্রাস পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, দেশের ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি, দেশের অর্থনৈতিক তথ্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটি নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই ও সমন্বিত করবে।